ঢাকার নতুন আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজের অধিষ্ঠান অনুষ্ঠান

ঢাকার নতুন আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজের অধিষ্ঠান অনুষ্ঠান

আজ ২৭ নভেম্বর ২০২০ খ্রিস্টাব্দে, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র কাকরাইলের ক্যাথিড্রালে অনুষ্ঠিত এই আর্চবিশপীয় অধিষ্ঠান অনুষ্ঠানে প্রধান পৌরহিত্য করেন নবনিযুক্ত আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ ওএমআই। ।

এক ধর্মীয় ভাব-গাম্বীর্যের মধ্য দিয়ে ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ ওএমইআই-এর আর্চবিশপীয় অধিষ্টান (দায়িত্ব গ্রহণ) অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

একই দিনে ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশের অবসর গ্রহণকারী আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সেন্ট মেরীস্ ক্যাথিড্রালের মূলদরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে নতুন আর্চবিশপকে গ্রহণ করে নেওয়া হয়। অতপর পুণ্যপিতা পোপের প্রতিনিধি ভাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী অধিষ্ঠানের অনুজ্ঞাপত্র ঘোষণাপূর্বক নতুন আর্চবিশপের অধিষ্ঠানপর্বটি পরিচালনা করেন। এ সময় তাদের সাথে ছিলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও।

পবিত্র খ্রিষ্টযাগের উপদেশে নতুন আর্চবিশপ বলেন, আমরা যিশুর শিষ্য হওয়ার জন্য আহ্বান পেয়েছি। ঈশ্বর নিজ কথা প্রবক্তাদের মুখ দিয়ে বলেছেন। আমরা অযোগ্য কিন্তু ঈশ্বর চান তার জনগণ তার মতো হয়ে উঠবে।

আর্চবিশপ বিজয় আরো বলেন, এই ধর্মপ্রদেশে রয়েছে অনেক অভিজ্ঞ পবিত্র যাজক, ব্রতধারীণী ও খ্রিষ্টভক্ত, তারাই হবে আমার চলার পথের শক্তি। বিশপীয় আন্তধর্মীয় সংলাপ কমিশনের চেয়ারম্যান আর্চবিশপ বিজয় বলেন, ধর্মবিশ্বাসের একটা শক্তি আছে। আমি বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় নেতাদের সাথে মিশেছি। তাদের সাথে চলে আমি অনুপ্রাণীত হয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছি ধর্ম একতা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ আমরা সব মানুষ এক সৃষ্টিকর্তার জীব।

তিনি আরো বলেছেন, আমাদের শুধু শিক্ষা দাতা নয় সাক্ষ্য দাতা হতে হবে। এখন বর্হিমুখি হতে হবে। আমাদের রয়েছে কত সুন্দর সুন্দর প্রতিষ্ঠান। যেমন কারিতাস, ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য দাতা হয়ে উঠবো।
ঢাকার অবসরপ্রাপ্ত আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও তাঁর উত্তরসরি আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘তুমি আমাদের পরিচালক, তুমি যে প্রভুর মনোনীত জন। প্রভুর মনোনীত জন রূপে পুণ্যপিতা পোপ মহোদয় তোমাকে বেছে নিয়েছেন। তুমি প্রিয়জন ও প্রিয় পালক। তোমাকে জানাই অন্তরভরা অভিনন্দন। তোমার কন্ঠস্বর শুনতে আমরা উন্মুক।’

 অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মানেনীয় প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যরিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, দুইজন খ্রিষ্টান সংসদ অ্যাডভোকেটি জুয়েল আরেং, এমপি ও অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, এমপি।

অধিষ্ঠান অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সকল বিশপ ও দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ ৪৫০ জন খ্রিষ্টভক্ত।

করোনা পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠানটিতে কেবল মাত্র ধর্মপল্লী বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি’র ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের কর্মদায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণের আবেদনটি মুঞ্জুর করে তাঁর স্থলে সিলেট ধর্মপ্রদেশের বিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুশ ওএমআইকে ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ হিসেবে মনোনয়ন দেয় ভাটিকান। আর্চবিশপ সরকার ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে মেলবন্ধন এবং বর্হিবিশ্বে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজের জন্ম নবাবগঞ্জের পুরান তুইতাল গ্রামে ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন তখন তাঁর বাবা গোল্লা ধর্মপল্লীতে বাড়ি করেন। তাঁর বাবা মধ্য প্রাচ্যে চাকরি করতেন। বাবা যখন দেশে আসতেন তখন তিনি দেখতেন ধর্মের প্রতি তাঁর বাবার কত ক্ষুধা। তাঁর বাবার ভক্তি পুষ্পের প্রার্থনা সব মুখস্ত ছিলো। তিনি সব সময় রোজারি মালা করতেন।
আর্চবিশপ বিজয় যখন কিশোর ছিলেন, তখন শহীদ ফাদার ইভান্স সিএসসি’র পবিত্র জীবন দেখে তিনি নিজে ফাদার হতে অনুপ্রেরণা লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি যখন বান্দুরা স্কুলে পড়তেন তখন হলি ক্রস ব্রাদারদের সুন্দর জীবনাচরণ দেখে ধর্মীয় জীবনের প্রতি তাঁর আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়।

সিবিসিবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন, “আমরা ঈশ্বরের প্রশংসা ও গৌরব করি কারণ ঢাকার জনগণের জন্য এক সুযোগ্য ও সম্ভাবনাময় মেষপালককে দান করেছেন তিনি। ধর্মপাল একটি ধর্মপ্রদেশের মিলনের প্রতীক, কেন্দ্র ও প্রেরণা। আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ মিলন সাধনায় মগ্ন অন্তরের সাধন বাণী ধ্যান করে সেই মিলনের আদর্শ হয়ে উঠবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের জন্য এবং বাংলাদেশ মন্ডলীর জন্য ঈশ্বরের এক মূল্যবান উপহার। তাঁর জীবনের জন্য আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ এর উপর নিত্য অধিষ্ঠিত থাকুক ঐশ আশীর্বাদ ও পবিএ আত্নার প্রেরণা, এই কামনা করি।”

সুপিরিয়র জেনারেল সিস্টার মেরী মিনতি, এসএমআরএ বলেন, “মহামান্য বিশপ বিজয় এন. ডি’ ক্রুশ, ওএমআই,  ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন জেনে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই আনন্দিত। আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বর তাঁর জনগণকে পরিচালনার জন্য যে পরিকল্পনা করেন তা সব সময়ই উত্তম ও মঙ্গলজনক। মহাধর্মপাল হিসেবে তিনি ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশসহ সমগ্র বংলাদেশের জনগণকে তাঁর হৃদয়ের চারণভূমিতে রেখে স্বযত্নে পালন করবেন বলে আশা রাখি। পবিত্র আত্মার জ্ঞান-বুদ্ধি-প্রজ্ঞায় এবং ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিকতা, দূরদর্শিতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে বর্তমান যুগলক্ষণ অনুসারে উত্তম মেষপালক যীশুর অনুকরণে তিনি আমাদের পরিচালিত করবেন ব’লে প্রত্যাশা করি। আমাদের প্রার্থনা ও সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আমরা আর্চবিশপ মহোদয়ের পাশে থাকবো।” 

ইভা লুসি মারাক একজন খ্রিস্টভক্ত তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “ বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলী তথা খ্রিষ্ট ভক্ত পেলেন নবনিযুক্ত  আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুশ ওএমআইকে। তাই পিতা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। প্রার্থনা করি উনার আধ্যাত্বিক, মানসিক ও খ্রিষ্টীয় আর্দশের শক্তি যেন আরও সুদৃঢ় হয়ে উঠুক। যেন তাঁর পরিচালিত খ্রিষ্টীভক্ত তথা বাংলাদেশ কাথলিক মন্ডলী খ্রিষ্টের আলোকে আলোকিত হতে পারে।”

তিনি পুরোহিত হন ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে। ঢাকার আর্চবিশপের দায়িত্ব পালনের আগে তিনি খুলনা ও সিলেটের বিশপ হিসেবে সেবা দিয়েছেন।

Add new comment

1 + 5 =