করোনা কালে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা ও পরীক্ষা ব্যবস্থা

করোনা কালে – পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা ও পরীক্ষা ব্যবস্থা

জনাদেশ মেনে নিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার (০৭ জুন ২০২১) নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিলেন, “এবছর মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হচ্ছে না।“ তিনি বলেন, “পরীক্ষা নিয়ে মতামত জানানোর জন্য যে তিনটি ই-মেল আইডি রবিবার দেওয়া হয়েছিল, তাতে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩৪ হাজার ই-মেল এসেছে। তার মধ্যে ৭৯ শতাংশে ছিল পরীক্ষা বাতিলের দাবি। অগত্যা সেটাই মেনে নিল রাজ্য সরকার। মূল্যায়ন পদ্ধতি পরে ঘোষণা হবে।“ এরপরই হাইমাদ্রাসা, আলিম এবং ফাজিল পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন।

করোনা আবহে পরীক্ষার বিপক্ষে সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী। শুধু তাই নয়, তারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বেশ একজোটও। তাই মতামত নেওয়া হলে পরীক্ষার বিপক্ষেই যে ভোট বেশি পড়বে, তা ওয়াকিবহাল মহল আগে থেকেই ধরে রেখেছিল। কিন্তু ‘সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়েছে। সংগঠনের দাবি, ছাত্রছাত্রীদের টিকা দিয়ে, পরীক্ষাকেন্দ্র স্যানিটাইজ করে এবং শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া হোক। ‘শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চ’ও পরীক্ষা বাতিলের বিপক্ষে সওয়াল করেছে।

এদিকে করোনা কালে এখনও স্কুল-কলেজ বন্ধ। এক বছরের ওপর ধরে অনলাইনেই যাবতীয় পঠনপাঠন চলছে। কিন্তু এই পদ্ধতি কি আগামী দিনে বিকল্প হয়ে উঠতে পারে? এ নিয়ে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি আছে। তবে ক্লাসরুম টিচিংয়ের বিকল্প যে আর কিছুই হতে পারে না, তা অবশ্য সব শিক্ষকই মানছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই অনলাইন শিক্ষায় যেতে হয়েছে তাদের। তবে অধিকাংশের মতে এটি শিক্ষাদানের স্থায়ী বিকল্প হতে পারে না। অনেকেই বলছেন যে শিক্ষকদের সামনে পড়াশোনা করাই আসল পথ।

বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের কর্ণধার মানস ঘোষের বক্তব্য, “কোভিড পরিস্থিতিতে আমাদের অনলাইনেই শিক্ষাদান চালিয়ে যেতে হবে। বিদেশে এই পদ্ধতি এখন বেশি প্রচলিত। তবে ভারতে এর গ্রহণযোগ্যতা এখনও তৈরি না হলেও ভবিষ্যতে তা হবে। সমস্যার জায়গা হল, সারাদিন মোবাইল ফোনে চোখ রাখলে তার কুপ্রভাব পড়তে পারে ছাত্রছাত্রীদের উপর। এ বিষয়ে অভিভাবকদের নজর দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।“

কিংস্টন এডুকেশনাল ইনস্টিটিউটের কর্ণধার তীপম ভট্টাচার্যের অভিমত, “প্রায় এক বছর পার করে বেশ কিছু মাস অতিবাহিত হতে চলল অনলাইনেই পঠনপাঠন চলছে। তবে কারিগরি শিক্ষার প্র্যাকটিক্যাল অনলাইনে করানো মুশকিল। পড়ুয়ারা হাতে কলমে তা না শিখলে পরবর্তীকালে সমস্যা হবে। ফলে অনলাইনে পড়াশোনা কখনওই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হতে পারে না। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে হচ্ছে। এটাও চ্যালেঞ্জিং কাজ। অনলাইনে ছাত্রছাত্রীদের যতটা সম্ভব সুবিধা এবং পরিষেবা দেওয়া হলেও, ক্লাসে এসে পড়াশোনা করার কোনও বিকল্প হতে পারে না।“

এদিকে পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরিস্থিথি যে অবস্থ্যায় আছে তাতে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন, ক্লাসে গিয়ে পড়াশোনা কবে থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ভাবে শুরু করানো যাবে তা নিয়ে এখনি কিছু বলার উপযুক্ত সময় হয়নি। – অতনু দাস।

 

YouTube: http://youtube.com/veritasbangla

Website: https://bengali.rvasia.org

Add new comment

9 + 11 =