Radio Veritas Asia Buick St., Fairview Park, Queszon City, Metro Manila. 1106 Philippines | + 632 9390011-15 | +6329390011-15
সেলাম হান্স ব্রিঙ্কারদের।
সেলাম হান্স ব্রিঙ্কারদের।
হান্সের নাম শুনেছেন? হান্সের পুরো নাম - হান্স ব্রিঙ্কার। হান্স একটি ছোট্ট শিশু। হল্যান্ড বা নেদারল্যান্ড দেশটাকে সবাই চেনেন ঠিকই। হান্স ব্রিঙ্কারের বাড়ি ছিল এই নেদারল্যান্ডে। এই ছোট্ট হান্স কিন্তু কোন রক্তমাংসের শিশু ছিল না। হান্স একটি গল্পের চরিত্র মাত্র। গল্পটা এমনই হৃদয় স্পর্শী যে তার কথা মানুষ জানলে - ভাবে, গল্প নয় সত্য ঘটনা।
হান্স শীতের এক রাতে বাড়ির বাইরে যায়। তার বাড়ি থেকে কিছুটা এগিয়ে সমুদ্রের বাঁধ। এই বাঁধের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে চুইয়ে চুইয়ে জল বয়ে যাওয়ার শব্দ তার কানে আসে। মনে আসে সন্দেহ। আলো আঁধারীর মধ্যে হান্স বাঁধ থেকে নীচে নেমে আসে। খুঁজতে থাকে জল চুইয়ে আসার উৎসস্থল । শব্দ শুনে শুনে এগিয়ে যায় হান্স। বাঁধের দেওয়ালের গায়ে সে দেখতে পায় একটি ছোট্ট ছিদ্র। সমুদ্রের জল চুইয়ে চুইয়ে ওই ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসছে। তার অনুমান করতে বাকি থাকে না যে দেখতে হয়তো এটি একটি ক্ষুদ্র ছিদ্র কিন্তু সারা রাত ধরে এই ছিদ্র দিয়ে তাদের গ্রামে সমুদ্রের জল ঢুকলে ভোরবেলা তাদের গ্রামকে সমুদ্র গ্রাস করে নেবে।
না আর একটুও দেরী করে নি হান্স। কোন দ্বিতীয় ভাবনা তার মাথায় আসার আগেই সে তার বুড়ো আঙ্গুলটি ঢুকিয়ে দিলো বাঁধের গায়ে সেই ক্ষুদ্র ছিদ্রের মধ্যে। সমুদ্রের জল তাদের গ্রামে ঢোকা বন্ধ হল। কনকনে শীতের সারা রাত সে বসে থাকলো ওখানেই তার বুড়ো আঙ্গুল ঢুকিয়ে। ভোর হতেই গ্রামের লোকজন হারিয়ে যাওয়া হান্সকে খুঁজতে খুঁজতে বাঁধের কাছে আসে। ঠাণ্ডায় প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থ্যায় পড়ে থাকা হান্সকে দেখে তাদের বুঝতে বাকি থাকে না আসল ঘটনাটা ঠিক কি।
হান্স ব্রিঙ্কার একটি কাল্পনিক চরিত্র। তার গল্প কথা শুনে গর্ব অনুভুত হয়, লাগে মন ভালো। কিন্তু সে কোন রক্তমাংসের শিশু ছিল না। বিগত ২৬ মে ২০২১ ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ আছড়ে পড়ে ভারতের ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে। ‘যশ’এর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলা বিপর্যস্ত হয়। সমুদ্র হয়ে ওঠে উত্তাল। যদিও সরকারী ভাবে নানা সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছিল এই ঘূর্ণিঝড় ঢোকার অনেক আগে থেকেই তবুও নদী এবং সমুদ্রের উপচে পড়া জল পাড় অতিক্রম করে এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাঁধ ভেঙ্গে উজাড় করে দেয় গ্রামের পর গ্রাম। মানুষের হাহাকার শোনা গেছে শুধু। খেতের পর খেত জল থই থই । সোনার ফসল – গাছ সব শেষ প্রকৃতির এই রোষে। সেইদিন থেকে আজ - এক সপ্তাহ কেটে গেল কিন্তু জল কিছু অঞ্চলে এখনও নামে নি। ১৫ লক্ষের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরকারী ব্যবস্থা করা হয়। ১০ কোটি টাকার ত্রাণ পাঠায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এখনও অনেক মানুষ রয়েছেন গৃহহীন। রয়েছেন নানা বন্যা ত্রাণ শিবিরে।
২৬ মে বুধবার সকাল ৯টা ১৫তে, নির্ধারিত সময়ের আগেই ওড়িশার বালাসোরের ২০ কিমি দক্ষিণে আছড়ে পড়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ‘যশ’এর তাণ্ডবে তছনছ হয়। মারা যান এক ব্যাক্তি। প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়ে দুই ২৪ পরগনায় এবং গ্রামীণ হাওড়া জেলাতেও। ১৩৪ টি নদী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ৩ লক্ষ্যের বেশি বাড়ির। রাজ্যের ১ লক্ষ ১৬ হাজার একর জমিতে লবণাক্ত জল ঢুকেছে। আর ঠিক সেই সময়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা ব্লকে দেখা গেল অনেক হান্স ব্রিঙ্কারদেরকে, যারা বাঁধ আগলে দাঁড়িয়ে আছে। এবং সব থেকে বড় কথা হল তারা হাসি মুখে ধেয়ে আসা উপচে পড়া জলস্রোত তাদের পিঠে আঘাত নিয়ে বাঁধ রক্ষা করছে। আমাদের শতকোটি সেলাম আমাদের পশ্চিমবঙ্গের এই অখ্যাত গ্রামের, অখ্যাত হান্স ব্রিঙ্কারদের।
ছবি – অসীমা কয়াল, পাথরপ্রতিমা, পঃবঙ্গ। প্রতিবেদন – অতনু দাস।
Facebook: http://facebook.com/veritasbangla
Website: https://bengali.rvasia.org
Add new comment