ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ এগিয়ে আসছে , দুপুরেই আঘাত হানবে পশ্চিমবঙ্গে।

 ঘূর্ণিঝড় যশ এগিয়ে আসছে , দুপুরেই আঘাত হানবে পশ্চিমবঙ্গে

 

ঘূর্ণিঝড় যশের ‘দৃষ্টি’ মূলত ওড়িশা উপকূলে। ঘূর্ণিঝড়ের যা গতিবিধি, তাতে আজ, বুধবার দুপুর নাগাদ ‘যশ’ আছড়ে পড়বে বালেশ্বর ও ধামড়ার মধ্যবর্তী অংশে। আর কয়েক ঘণ্টা পর বঙ্গোপসাগরের উপকূলে আছড়ে পড়বে ‘যশ’ । আছড়ে পড়ার আগেই রুদ্ররূপ ধারণ করছে সে। সকাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘাতে মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট শুরু হয়েছে । জলমগ্ন রাস্তা, ভাসছে গাড়ি। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সাগরের বেশ কিছু নদী বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে । কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যেপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘মঙ্গলবার রাতে এটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে অগ্রসর হয়েছে এবং আজ দুপুরের দিকে উপকূলে আছড়ে পড়বে।’ তবে ওড়িশার পাশাপাশি ঝড় বয়ে যাবে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়েও। হবে প্রবল বৃষ্টি। মূলত পূর্ব মেদিনীপুরে এর প্রভাব পড়বে বেশি। বাদ যাবে না দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলাগুলোও। যশের তাণ্ডবে দুর্যোগ অবধারিত। এমনই পূর্বাভাস কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের। ইতিমধ্যে যশের প্রভাব শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যে।

 

আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে যা জানা যাচ্ছে, রাজ্যের অনেকটা অংশ জুড়েই উপদ্রব চালাবে এই ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। অধিকাংশ জেলায় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে হবে ব্যাপক বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি ওড়িশা উপকূলের যে অংশে আছড়ে পড়বে, সেখান থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের দূরত্ব ভীষণ কম। তাই ওই জেলাতেই বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের গতিবেগ সবথেকে বেশি হবে বলে আবহাওয়া দপ্তর মনে করছে। ইতিমধ্যেই ওই জেলায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, আজ সকাল থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়া বইছে যার গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিমি। তবে দমকা বাতাস এলে সেই মুহূর্তের গতিবেগ ১৪৫ কিমি পর্যন্ত পৌঁছবে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির (২৪ ঘণ্টায় ২০৪.৫ মিমির বেশি) সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। উত্তাল থাকবে সমুদ্র। জোয়ারের সময় সমুদ্রে জলস্তর যতটা বাড়ে, তার তুলনায় আরও দুই থেকে চার মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফলে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। যশের প্রভাবে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি হবে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। পশ্চিম মেদিনীপুরে অতি ভারী এবং ঝাড়গ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। একই মাত্রার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বাঁকুড়াতেও। কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬৫ থেকে ৮৫ কিমি হতে পারে। উত্তর ২৪ পরগণা, হুগলি, হাওড়া, নদীয়া, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৯০ কিমি হতে পারে। বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদে ঝড় হতে পারে ঘণ্টায় ৫০-৭০ কিমি বেগে। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য আজ ভারতীয় রেল ৯০ টি ট্রেন বাতিল করেছে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে আজ বিমান ওঠা ও নামা সকাল ৮:৩০ থেকে রাত ৭:৪৫ অবধি সাময়িক ভাবে বন্ধ আছে।

 

‘আতঙ্কিত হবেন না, সতর্ক থাকুন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হবেন না।’ ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ নিয়ে রাজ্যবাসীকে মঙ্গলবার এমনই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  উম-পুনের সময়েও নবান্নের ওয়াররুমে বসে ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যশ মোকাবিলাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি বিন্দুমাত্র। প্রতিমুহূর্তে প্রত্যেক জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি। মাঝেমধ্যে আবার বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কন্ট্রোল রুমে এসে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টা। আর সেই অনুযায়ীই আসন্ন অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় তৈরি হচ্ছে প্রশাসন।

 

উল্লেখ্য মঙ্গলবার বিকেলে হুগলী এবং উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় বিকেল ৪:৩০ নাগাদ  হঠাৎই টর্নেডো তৈরি হয়। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে গঙ্গাপাড়ের দুই শহর, ব্যান্ডেল এবং হালিশহর। গঙ্গা থেকে তৈরি হওয়া টর্নেডোর দাপটে ব্যান্ডেল সহ চুঁচুড়া পুরসভার একাধিক ওয়ার্ড ও উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি এবং হালিশহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু ব্যান্ডেল ও চুঁচুড়া মিলিয়ে প্রায় ৮০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জখম হয়েছেন অন্তত ১০ জন। নৈহাটি ও হালিশহর মিলিয়ে প্রায় ৭৬টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জখম ৮ জন। সঞ্জীববাবু অবশ্য জানিয়েছেন, ঝড়ের আগে এমন ঘটনা দেখা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে আগেই টর্নেডো তৈরি হচ্ছে।

ছবি – অসীমা কয়াল এবং সংগৃহীত। প্রতিবেদন: অতনু দাস, - কলকাতা

Add new comment

4 + 6 =