Radio Veritas Asia Buick St., Fairview Park, Queszon City, Metro Manila. 1106 Philippines | + 632 9390011-15 | +6329390011-15
আজ বাংলা নববর্ষ – ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
পয়লা বৈশাখ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি সকল বাঙালী জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন।
এই দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নিযয়ে থাকে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোকউৎসব হিসাবে বিবেচিত।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশের প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমী কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে চান্দ্রসৌর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। এছাড়াও দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গৃহীত। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা দিনটি নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেয়।
এই উৎসবটি শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হল "শুভ নববর্ষ"।
বাংলা দিনপঞ্জীর সাথে হিজরী এবং খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরী সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন আন্তর্জাতিক মানদ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এ কারণে হিজরী সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় আকাশে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার পর আর খ্রিস্টীয় সনে নতুন দিন শুর হয় ইউটিসি অনুযায়ী।
বর্তমানে নববর্ষ পারিবারিক-সামাজিক জীবনকে তো নব-উদ্দীপনায় জাগ্রত করেই; পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনেও করে গতিসঞ্চার। কিন্ত এই বছর করোনার জন্য উৎসব পালন করা বন্ধ রয়েছে।
এই উৎসব সব ভেদাভেদ ভুলে সব বাঙালিকে মিলিত করে এক সম্প্রীতির মোহনায়। নববর্ষের আগমনী ধ্বনি শুনলেই পুরো জাতি নতুনের আবাহনে জেগে ওঠে। গ্রামের জীর্ণ কুটির থেকে শহরের বিলাসবহুল বহুতল ভবন কিংবা দূর প্রবাসের ম্যাগাসিটি, সর্বত্রই প্রবাহিত হয় আনন্দের ফল্গুধারা।
সম্রাট আকবর বাংলা নববর্ষ প্রচলন করলেও নববর্ষ পালনের ইতিহাস বহু পুরনো। সর্বপ্রথম নববর্ষ পালিত হয় মেসোপটেমিয়ায়, ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। খ্রিস্টীয় নববর্ষ চালু হয় জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে। রাশিয়া, চীন, ইরান ও স্পেনে নববর্ষ পালিত হতো ঘটা করে। মুসলিম শাসকদের হাত ধরে ইরানের নওরোজ ভারতবর্ষে আসে।
মোগল আমলে খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে নওরোজ উৎসব পালন করা হতো। নওরোজ উৎসবেই জাহাঙ্গীরের সঙ্গে নূরজাহানের প্রথম মনবিনিময় হয়েছিল। সম্রাট আকবর বাংলা নববর্ষ চালু করেন বছরের নির্দিষ্ট সময় প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার জন্য। ফসল তুলে আনন্দের সঙ্গে খাজনা দেওয়া এবং মিষ্টি খাওয়ানোর সঙ্গে কালে কালে যুক্ত হয় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক আচার-বিশ্বাস, রীতিনীতি ও আনন্দ-বিনোদনের উপাদান।ধীরে ধীরে দিনটি হয়ে ওঠে শুভ চিন্তা ও অনুভূতির দ্যোতক।
লোকমেলা, পুণ্যাহ, হালখাতা, গাজনের গান, লাঠিখেলা, ঘোড়দৌড়, পুতুলনাচ, জারি-সারি-বাউল গান; এসব যুক্ত হতে হতে নববর্ষ আজ অস্তিত্বের শক্তিদায়িনী উৎসবে পরিণত হয়েছে।
সামাজিক উৎসব হিসেবে নববর্ষ পালন শুরু হয় উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ্বে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নিজেদের শাসন পাকাপোক্ত করতে গিয়ে যতই বাঙালির ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির টুঁটি চেপে ধরেছে ততই বাংলা নববর্ষ পরিণত হয়েছে বাঙালির শক্তি-সাহস, প্রেরণা ও উদ্দীপনার মূলমন্ত্ররূপে।
বাংলা নববর্ষ আবারও এসেছে আমাদের মাঝে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করে নববর্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সাংস্কৃতিক সৌধের ভিত আরো দৃঢ় করুক।
নববর্ষের উদার আলোয় এবং মঙ্গলবার্তায় জাতির ভাগ্যাকাশের সব অন্ধকার দূরীভূত হোক। একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক এটিই হোক এবারের নববর্ষের প্রত্যয়। (তথ্য: সংগৃহিত)
Add new comment