সুরশুনীপাড়া ধর্মপল্লীতে প্রভুর নিবেদন পর্ব উদযাপন

প্রভু যীশুর নিবেদন পর্ব উদযাপন

গত ২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, সুরশুনীপাড়া ধর্মপল্লীতে প্রভুর নিবেদন পর্ব উদযাপন করা হয়। পবিত্র খ্রীষ্টযাগের মধ্যদিয়ে শুরু হয় প্রভুর নিবেদন পর্ব।

পবিত্র খ্রীষ্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও। এছাড়াও  ১২ জন যাজক ১১ জন সিস্টার ও প্রায় ৬০০ খ্রীষ্টভক্ত খ্রীষ্টযাগে অংশগ্রহণ করেন। এই পবীর্য় খ্রীষ্টযাগে ১৭৭ জন ছেলেমেয়ে বিশপ কর্তৃক হস্তার্পন সংস্কার গ্রহণ করেন।

বিশপ মহোদয় তার উপদেশ সহভাগিতায়  বলেন, “আজ প্রভুর নিবেদন পর্ব পালন করছি। কুমারী মারিয়া ও সাধু যোসেফ শিশু যীশুকে মন্দিরে নিবেদন করেছেন ইহুদী সমাজের প্রথাঅনুসারে। কিন্তু যীশু সম্পূর্ণভাবে নিজেকে নিবেদন করলেন যেন আমরা পরিত্রাণ পাই।”

তিনি আরো বলেন, “ যীশু আমাদের মুক্তির জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করলেন। আমরাও যেন যীশুর অনুসারী খ্রীষ্টবিশ্বাসী হিসাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে নিজেকে মণ্ডলীর কাজে নিবেদন করতে পারি। আজকে যারা হস্তার্পন সংস্কার গ্রহণ করছে তাদের জন্য প্রার্থনা করি তারা যেন পবিত্র আত্মার শক্তিতে শক্তিমান হয়ে খ্রীষ্টের সাক্ষ্য বহন করতে পারে।”

সুরশুনীপাড়া ধর্মপল্লীর একজন খ্রীষ্টভক্ত বলেন, “আজকের এই পর্ব  উদযাপন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আজকে প্রভুর নিবেদন পর্বে আমি প্রার্থনা করি যেন, একজন খ্রীষ্টবিশ্বাসী হিসাবে যীশুর আদর্শ অনুসরণ করে তাঁর বাণী প্রচার কাজে নিজেকে নিবেদন করতে পারি।”

খ্রীষ্টযাগের পর পাল-পুরোহিত ফাদার আন্তনী হাঁসদা বলেন, “ আপনাদের সকলকে পর্বীয় শুভেচ্ছা জানাই এবং এই পর্বীয় খ্রীষ্টযাগে অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আজকে যারা হস্তাপর্ণ সংস্কার গ্রহণ করেছে তাদের অভিনন্দন জানাই।” 

খ্রীষ্টযাগের পর একটি ক্ষুদ্র সাংস্কৃতিক বিদায়-বরণ অনুষ্ঠান করা হয়। পালপুরোহিত ফাদার আন্তনী হাঁসদা যিনি দীর্ঘ সময় এই ধর্মপল্লীতে কাজ করেছেন এখন তিনি নতুন দায়িত্ব নিয়ে পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীতে যাবেন তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

একই সাথে নতুন পাল-পুরোহিত ফাদার কার্লো দত্তি, পিমে এবং সহকারী পালপুরোহিত ফাদার প্রদীপ কস্তাকে বরণ করে নেওয়া হয়।

১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে সুরশুনিপাড়া ধর্মপল্লী গঠন করা হলেও এখানে খ্রিস্টানদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো এখন থেকে ১০৪ বছর আগে, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে। এখানে মাহালী আদিবাসীদের প্রথম দীক্ষা দেন।

তখন থেকে আন্ধারকোঠা ধর্মপল্লীর যাজকগণ খ্রিস্টভক্তদের দেখশোনা করতেন। প্রথম দীক্ষার প্রায় ৫৮ বছর পরে, ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে এখানে একটি কাঁচা গির্জা নির্মাণ করা হয়। সিস্টারদের স্থায়ী আবাসনের জন্য ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয় একটি কনভেন্ট।

খ্রিস্টভক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধিলাভের কারণে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে একটি আধাপাকা গির্জা নির্মাণ করা হয়। পরে গির্জা চত্বরের প্রধান ফটক ঘেসে বর্তমান সুদৃশ্য গির্জাটি নির্মাণ করা হয় ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে।

বর্তমানে এই ধর্মপল্লীতে বিভিন্ন সংঘ-সমিতির পাশাপাশি রয়েছে, বিদ্যালয়, ছেলে-মেয়েদের বর্ডিং, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, ইত্যাদি। এখানে কর্মরত যাজকগণ হলেন, কার্লো দত্তি, আন্তনী হাঁসদা, শৈবাল ফ্রান্সিস রোজারিও। যাজকদের পালকীয় কাজে সহযোগিতা দিচ্ছে চ্যারিটি সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ।

বর্তমানে সুরশুনিপাড়া ধর্মপল্লীতে মোট খ্রিস্টভক্তের সংখ্যা সাত হাজারের অধিক।- ফাদার সুরেশ পিউরীফেকেশন

Add new comment

2 + 1 =