সিলেট ধর্মপ্রদেশে অনুষ্ঠিত হল নতুন বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজে’র অধিষ্ঠান অনুষ্ঠান

, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার লক্ষ্মীপুর অস্থায়ী ক্যাথিড্রালে নতুন বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজে’র অধিষ্ঠান

গত ২০ জুলাই ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার লক্ষ্মীপুর অস্থায়ী ক্যাথিড্রালে নতুন বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজে’র অধিষ্ঠান প্রদান করেন পুণ্যপিতা পোপের প্রতিনিধি আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি এবং তাঁর সাথে ছিলেন ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ওএমআই।

পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস তাঁকে গত ১২ মে সিলেটের বিশপ হিসেবে নিয়োগ দেন। ঢাকার সহাকরী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ সিলেট ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশের বিশপ হিসেবে অধিষ্ঠান লাভ করেছেন।

বর্তমান পরিস্থিতি ও করোনা মহামারির কারণে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হয় বিশপীয় অধিষ্ঠান অনুষ্ঠান। সাপ্তাহিক প্রতিবেশী ফেসবুকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে। ফলে স্বশরীরে উপস্থিত হতে না পেরেও শত শত মানুষ ফেসবুকের মাধ্যমে অধিষ্ঠান অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার সিএসসি, খুলনার বিশপ জেমস রমেন বৈরাগী, দিনাজপুরের বিশপ সেবাষ্টিয়ান টুডু, ঢাকার অবসরপ্রাপ্ত বিশপ থিওটোনিয়াস গমেজ সিএসসি।

সিলেট ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশ নব অধিষ্ঠিত বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ তাঁর উপদেশে বলেন, “সিলেট ধর্মপ্রদেশ মঙ্গলবাণী প্রচারের উর্বর ভূমি। প্রভু আজ নতুন করে আমাদের প্রত্যেকের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করতে চান, যেন ধর্ম পালনের সাথে একাত্ম হয়ে আমরা ঈশ^রের বাণী প্রচারের কাজে আরও গভীরভাবে মনোনিবেশন করি। ঈশ^রের সন্তানদের যত্ন নিই”।

তিনি আরো বলেন, “ভক্তজনগণের অংশগ্রহণে মণ্ডলী ও দেশ গঠনে আমি চেষ্টা করবো। এই ধর্মপ্রদেশে পারস্পরিক সংলাপে ও ধর্মীয় আহ্বান বৃদ্ধিতে আমি আরও বেশি সচেষ্ট হবো”।

আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ ক্রুজ, ও.এম.আই সস্মরিণকায় দেওয়া এক বাণীতে বলেন,  “কাথলিক মন্ডলীতে বিশপদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভা আমাদের এই শিক্ষা দেয়: “অভিষেকের মধ্য দিয়ে যে পবিত্রআত্মাকে বিশপদের দেয়া হয়েছে তাঁরই বলে বিশপদের গড়ে তোলা হয়েছে ধর্মবিশ^াসের সত্য ও খাঁটি শিক্ষকরূপে এবং তাদের করা হয়েছে যাজক প্রাধান ও পালক” (বিশপদের পালকীয় কার্যাবলী ২:২)।

“বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস একজন জ্ঞানী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন পরিচালক ও নেতা, অত্যন্ত সহজ-সরল, প্রার্থনাশীল, কঠোর পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল, বন্ধুবৎসল, গরীব দু:খীদের প্রতি অত্যন্ত দরদী ব্যক্তি। ঈশ্বরের উপর পুণ্য বিশ্বাস রেখে বিশপ তার পালকীয় সেবা দিয়ে যাবে এটাই আমি বিশ্বাস করি”, বলেন আর্চবিশপ বিজয়।

সিলেট ধর্মপ্রদেশের সাতটি ধর্মপল্লীতে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার ক্যাথলিক খ্রিষ্টভক্ত। পঁয়তাল্লিশ জন ফাদার-সিস্টার-ব্রাদার ও বেশ কিছু কাটেখ্রিষ্ট সেবা দিচ্ছেন এই ধর্মপ্রদেশে।

এখানকার খ্রিষ্টভক্তদের মধ্যে বড় একটা অংশ খ্রিষ্টভক্ত রয়েছেন চা বাগানের জনগোষ্ঠী। তাঁদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নই হচ্ছে ধর্মপ্রদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

সিলেট ধর্মপ্রদেশ ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা থেকে আলাদা হয়ে নতুন ধর্মপ্রদেশ হিসেবে পথ চলা শুরু হয়েছিল এবং এর প্রথম বিশপ হিসেবে দায়িত্ব¡ পালন করেন বিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই যিনি বিগত নভেম্বরে ঢাকার আর্চবিশপ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

বিশপ শরৎ তার দেওয়া এক সাক্ষ্যাৎকারে বলেন, আমি বিনম্র ভাবে প্রভুর উপর আস্থা রেখে ও নির্ভর করে এ দায়িত্ব গ্রহণকরছি। এখনও গভীরতায় অনুভব বা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করছি আমাকে পাঠানোর পিছনে ঈশ্বরের একান্ত ইচ্ছাকে অন্তরে ধারণ করে যেন মেষদের ভালবাসতে ও যত্ন নিতে পারি।

আমি মনে করি প্রাথমিক ভাবে আমার কাজ হবে ধর্মপ্রদেশের চলমান কার্যক্রমের সাথে একাত্ম হওয়া, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনকরা। পূর্বসূরীর চলমানধারাকে অব্যাহত রাখা, প্রয়োজনে তা আরও সক্রিয় করে তোলা।

ধর্মপ্রদেশের পরামর্শ পরিষদ, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মরত ফাদার, সিস্টার, ব্রাদার ও ভক্তদের সাথে আলোচনা ও সহভাগিতার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো অনুধাবন সাপেক্ষে একত্রে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা ও সেই মোতাবেক কাজ করা।

তিনি তাঁর ভবিষৎ বলেন, তবে অবশ্যই আমি কিছু বিষয় প্রাধান্য দিয়ে পালকীয় সেবা দিতে সচেষ্ট থাকবো। সেগুলো হলো বিশ্বাসের গঠন, বাণীপ্রচার, ধর্ম শিক্ষা জোরদার, শিক্ষারপ্রসার, যুবসমাজের গঠন, ক্ষুদ্র খ্রিষ্টীয় সমাজ গঠন, আদিবাসী ভাইবোনদেও অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা।

বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজে জন্ম ঢাকার আঠরগ্রামের হাসনাবাদে ১৫ ডিসেম্বর ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে। তাঁর বাবা মৃত আগস্টিন মধু গমেজ ও  মা থেকলা গমেজ। তিনি ভাইবোনরে মধ্যে দ্বিতীয় এবং একমাত্র ছেলে। তাঁর দুইবোনই সিস্টার। বড়বোন সুনীতা গমেজ আরএনডিএম ও ছোট বোন সিস্টার অনীতা গমেজ ওএলএস। দেশের ইতিহাসে তাঁদের পরিবারের সকলে ঈশ^রের দ্রাক্ষাক্ষেত্রে সেবায় নিয়োজিত।

তিনি যাজক হিসেবে অভিষেক লাভ করেন ৩১ মে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৯৮-২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঐশ্বতত্ত্বে লাইসেন্সিয়েট এবং ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি রমনা, নাগরী, মঠবাড়ী ও তেজগাঁও ধর্মপল্লীতে প্রৈরিতিক সেবা দিয়েছেন। সেবা দিয়েছেন বনানী পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীতে পরিচালক হিসেবে। তিনি ছিলেন সিলেট ধর্মপ্রদেশ ও ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল।

Add new comment

2 + 2 =