Radio Veritas Asia Buick St., Fairview Park, Queszon City, Metro Manila. 1106 Philippines | + 632 9390011-15 | +6329390011-15
মারা গেছেন রেডিও ভেরিতাসের সাবেক বাংলা বিভাগের প্রযোজক ও সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সাংবাদিক সাইফুদ্দিন সবুজ
গত ১৩ এপ্রিল ২০২০ খ্রিস্টাব্দে, আনুমানিক রাত ৯টায় ইসলামিক ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সুগার ফল্ড করার কারণে তাঁকে গত সোমবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর এক সপ্তাহ পর তাঁর সুগার অতিমাত্রায় ফল্ড করার কারণে আজ প্রাণত্যাগ করেন।
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, কমিউনিটি রেডিও আন্দোলনের অগ্রদূত, সাংবাদিক, দেশ-বিদেশের লাখো বেতার শ্রোতার প্রিয়জন সাইফুদ্দিন সবুজ। তিনি একজন প্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রেডিও ভেরিতাস ও সাপ্তাহিক প্রতিবেশিতে সেবা দিয়েছেন। তিনি প্রকৃতি পাবলিকেশন ও মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন। সর্বশেষ তিনি জাতি সংঘের ফাও প্রোগ্রামের কমিউনিটি রেডিও’র কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি রূপান্তর কমিউনিটি রেডিও’র পার্টনার হিসেবে দক্ষতার সাথে সেবা দিয়েছেন।
তার সম্পর্কে ফাদার সুনিল বলেন ; সেই ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসের গল্প। আমি সবেমাত্র খ্রিস্টিয় যোগাযোগ কেন্দ্র তথা বাণীদিপ্তীর পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছি। নারায়নগঞ্জের ছেলে স্বপন পিউরিফিকেশন মাঝেমধ্যে প্রতিবেশী অফিসে আসতো ছোটোখাটো সাহায্য নিয়ে। স্বপনের হাত ধরেই নারায়নগঞ্জের ছেলে সাইফুদ্দিন সবুজ ভূঁইয়া, একদিন বাণীদিপ্তী অফিসে এসে হাজির। স্বপন আমাকে বললেন, “ফাদার ছেলেটা ভালো, ওকে রেডিও ভেরিতাসের কিছু কাজ করতে দেন।” তখন আসলেই রেডিও ভেরিতাসের বাংলা অনুষ্ঠানের জন্য কর্মীর দরকার ছিলো। আমি বললাম এইটুকু ছেলে নিয়ে আমি কী করবো। ও-কী আমাকে উদ্ধার করতে পারবে ? কিছুদিনের মধ্যেই সবুজ মিশে গেলো রেকর্ডিস্ট তপন গমেজ এবং শেখর গমেজের সাথে। সবুজকে বললাম ‘সঞ্চয় সাবলম্বন’ অনুষ্ঠানটি তোমাকে দিয়ে শুরু করতে চাই আর আমি করবো ‘আজকের গণমাধ্যম।’ আর আমাকেও সাহায্য করবে। সবুজের মধ্যে অধ্যবসায়, কাজের প্রতি সততা, অন্যের সাথে মেলমেশা, সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা খুব সহজেই তাকে পরিচিত করে তুললো বাংলাদেশ ক্যাথলিক মন্ডলির সর্বত্র। রেডিওর কাজে সে আমার সাথ বাংলাদেশের প্রায় সব ধর্মপল্লীতে ঘুরে বেড়িয়েছে। একই কাজে তাকে বেশ কয়েকবার নিয়ে গিয়েছি পশ্চিম বাংলায়। সেখানেও সবুজ সমান পরিচিত। ফলে অচিরেই সবুজ দেশের বিশপ, ফাদার, সিস্টার ও খ্রিস্টানদের কাছে হয়ে উঠলো সবুজ এবং সবুজ ভাই। সবুজ, মুসলিম, খ্রিস্টান বা হিন্দু, সবার কাছে ছিলো এক প্রিয় মানুষ, সবুজ ভাই।
সাইফুদ্দিন সবুজ আমাকে আব্বা বলে ডাকতো। আমার কাছে সে সন্তানের মতোই দাবি করতো, আবদার করতো। মানুষকে বলে বেড়াতো, “ফাদার ডানিয়েল আমার আব্বা, আজকে তার হাত ধরেই আমি প্রতিষ্ঠিত।” এই দাবি ও আবদারের কারণে বার বার পরিবার নিয়ে আমার ধর্মপল্লীতে বড়দিনের উৎসব করতো। গত নভেম্বরে সবুজে স্ত্রী শামীমা আমাকে বললেন, আব্বা এবার কিন্তু বগুড়া আপনার সাথে বড়দিন করবো। আমি বললাম, বউ মা তুমি তো জানোই আমি তোমাদের পাশে পেলে খুশি হই।
সেটা হলো না বলে, ইস্টার করার কথা ছিলো আমার সাথে রাজশাহী পালকীয় কেন্দ্রে, আমার নতুন কর্মস্থলে। কিন্তু লকডাউনের কারণে সেটাও হলো না। এই লকডাউনের মধ্যেই চিরতরে চলে গেলো। শেষবারের মতো দেখারও সুযোগ পেলাম না। কিন্তু এই মুহুর্তে তার ডাকটি অনবরত কানের মধ্যে বেজে চলেছে “আব্বা কেমন আছেন ?”
তিনি বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিনের সাথে জড়িত ছিলেন। নির্মাণ করেছেন অসংখ্য প্রামাণ্যচিত্র।মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলে রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৮ বছর।
মুসলমান হয়েও তিনি খ্রিষ্টান কমিউনিটির কাছে ছিলেন একজন জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তার অসংখ্য প্রকাশনা ও কাজ সব সময় সমাজের উপকারে অনুসৃত হয়ে যাবে।
Add new comment