Radio Veritas Asia Buick St., Fairview Park, Queszon City, Metro Manila. 1106 Philippines | + 632 9390011-15 | +6329390011-15
মানবতার জননী মাদার তেরেজার জন্মদিন পালন
গত ২৬ আগষ্ট ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, মানবতার জননী মাদার তেরেজার জন্মদিন ছিল। ১৯১০ সনের এই দিনে মহীয়সী এই নারীর জন্ম হিয়েছিল আলবেনিয়ায়। তাঁর আসল নাম অ্যাগনেস গঞ্জা বয়াজু।
যেখানেই দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যু পথযাত্রীদের দুর্দশা, সেখানেই ছুটে যেতেন মাদার তেরেসা। তেরেসার নয় বছর বয়সেই তার বাবা মারা যান। সংসারের হাল ধরেন মা। তেরেসা বেড়ে উঠেন রোমান ক্যাথলিক আদর্শে।
মিশনারিদের ধার্মিক জীবনের গল্প ভালোবাসতেন। এই ভালোবাসা থেকেই সিদ্ধান্ত নেন ধর্মীয় জীবনযাপন করবেন। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ১৯২৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর গৃহত্যাগ করেন।
‘সিস্টার্স অব লরেটো’ সংস্থায় যোগ দিলেন সিস্টার হিসেবে। ১৯৩১ সালের ২৫ মে তিনি প্রথম সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। এবার নিলেন নতুন নাম, অ্যাগ্নেস গঞ্জা বয়াজু থেকে হয়ে উঠলেন সিস্টার তেরেসা।
১৯৩৭ সালের ২৮ মে ভারতের একটি কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর সময় চিরব্রত সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। এদিন থেকেই সিস্টার তেরেসা হয়ে উঠেন ‘মাদার তেরেসা’। শুরু হয় অন্য রকম পথচলা।
কিন্তু দরিদ্রদের সেবা ও সাহায্য প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতার কারণে বিচলিত হয়ে পড়েন। হৃদয়ে ভেসে উঠে ঈশ্বরের আদেশ। এবার ভাবলেন মানবসেবায় নিজেকে সরাসরি নিয়োজিত করবেন।
১৯৪৮ সালের ১৭ আগস্ট কলকাতার উদ্দেশ্যে কনভেন্ট ছাড়েন তেরেসা। কলকাতা এসেই ঘুরে বেড়াতে লাগলেন অলিগলি আর বস্তিতে, উদ্দেশ্য এদের সেবা করা। এরপর থেকে নীলপাড়ের সাদা শাড়ি পরা মাদার তেরেসাকে কলকাতার নোংরা বস্তি আর অলি-গলিতে দেখা যেতো। বস্তির এই ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য হাত পাতেন মানুষের দ্বারে দ্বারে।
ভীষণ কষ্টের ছিলো সেইসব দিনগুলো। কিন্তু তেরেসার দৃঢ়তার কাছে হার মানে সব কষ্ট।
এভাবেই এগিয়ে চলে তেরেসার মানবসেবা। এরপর মাত্র বারোজন সদস্য নিয়ে ১৯৫০ সালের ৭ অক্টোবর প্রতিষ্ঠা করেন ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি।’ যার শাখা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে আছে।
১৯৫২ সালে এই চ্যারিটির অধীনেই গড়ে উঠে ‘নির্মল হৃদয়’, কুষ্ঠ রোগীদের জন্য গড়ে তোলেন ‘শান্তি নগর’, ১৯৫৫ সালে স্থাপন করেন ‘নির্মল শিশুভবন’।
১৯৬৩ সালে গড়ে তোলা হয় ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’র ব্রাদার শাখা। দরিদ্র ও দুঃখীদের পাশেই শুধু নয় আর্তের সেবায় তিনি গিয়েছেন যুদ্ধের ময়দানে। সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে উদ্ধার করেছেন অসংখ্য মানুষ। যেখানেই ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা অথবা যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সেখানেই সবার আগে ছুটে গিয়েছেন মাদার তেরেসা। বাংলাদেশেও কয়েকবার এসেছিলেন এই মহীয়সী।
১৯৭১ বাংলাদেশ যখন মৃত্যুপুরী, তখন বসে থাকতে পারেননি তিনি। সব বাধার ভয় তুচ্ছ করে খুলনা সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পড়েন বাংলাদেশে। যুদ্ধাহত দেও সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে তোলেন।
পিতা-মাতা হারানো শিশুদের জন্য ঢাকায় গড়ে তোলেন ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি।’ যার শাখা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠে। বাংলাদেশের যেকোনো দুর্যোগ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ছুটে এসেছেন তিনি, দাঁড়িয়েছেন সব হারানোদের পাশে। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন ১৯৯১ সালে।
১৯৭৯ সালে শান্তিতে ‘নোবেল’ পুরস্কার দেয়া হয় তেরেসাকে। নোবেল পুরস্কারের টাকা পেয়ে তেরেসা বলেছিলেন ‘ভালোই হলো এই টাকায় ফুটপাথে শুয়ে থাকা মানুষগুলোর জন্য কিছু করা যাবে।’ শুধু নোবেল নয় তিনি প্রায় আটশ পুরস্কার পেয়েছিলেন জীবনকালে।
মাদার তেরেসার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা জানা যায় লেখক ম্যালকম ম্যাগারিজের মাদার তেরেসাকে নিয়ে ‘সামথিং বিউটিফুল ফর গড’ নামে তথ্যচিত্র এবং ‘সামথিং বিউটিফুল ফর গড’ নামে তেরেসার জীবনী নিয়ে লেখা বই থেকে। এই চিরমানবতাবাদী মহীয়সী নারীর মৃত্যু হয় ৮৭ বছর বয়সে ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সনে ভাটিকান তাঁকে সাধ্বী হিসেবে ঘোষণা করেন।- তথ্য: সংগৃহিত
Add new comment