Radio Veritas Asia Buick St., Fairview Park, Queszon City, Metro Manila. 1106 Philippines | + 632 9390011-15 | +6329390011-15
মহাপ্রয়ানে মিশনারী ফাদার যোসেফ পিশাতো, সিএসসি
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রিস্টাব্দে, সবাইকে কাঁদিয়ে সকাল ৮টায় প্রাণ ত্যাগ করলেন নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের ট্রেজারার ও নটর ডেম কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ফাদার যোসেফ পিশাতো, সিএসসি।
ঢাকার রামপুরায় হলিক্রস মরো হাউজে তিনি প্রাণত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
ফাদার পিশাতোর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে হলিক্রস ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার সম্প্রদায়সহ সকল ব্রতধারী সম্প্রদায় ও সুশীল সমাজের মধ্যে। এ ছাড়াও শিক্ষাঙ্গনেও ফাদারের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ফাদার পিশাতো ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে ৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুন তিনি হলিক্রস সম্প্রদায়ের ফাদার হিসেবে অভিষিক্ত হন।
তিনি পালকীয় কাজে মিশনারী হয়ে চলে আসেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মানুষকে ভালবেসে দীর্ঘ ৫৯ বছর কাটিয়ে দেন বাংলার মাটিতে। হয়ে ওঠেন আদ্যোপ্রান্ত একজন বাঙালি।
তিনি ৩৫ বছর নটর ডেম কলেজে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নটর ডেম কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজন গ্রহণীয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশের পবিত্র ক্রুশ যাজক সংঘের প্রভিন্সিয়াল ফাদার জেমস সি. ক্রুশ সিএসসি ফাদার পিশোতোর বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন বলেন, ‘ফাদার পিশোতো যাজক হওয়ার পরই বাংলাদেশে মিশনারি হিসেবে আসেন। এ দেশকে তিনি খুব ভালোবেসেছেন। এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসেছেন। মিশনারি হিসেবে তাঁর অনেক বড়ো একটা অবদান হলো জাতি-ধর্ম-বর্ণ সকলকে শিক্ষা দেওয়া। এই নটর ডেম কলেজকে কেন্দ্র করে তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নয়নের পথ দেখিয়েছেন। এই শিক্ষাকে তিনি সেবা হিসেবে নিয়েছেন।’
‘এই শিক্ষা সেবার পাশাপাশি তিনি সমাজ কল্যাণের অনেক কাজ করেছেন। তিনি আর্ত মানুষের সেবা করেছেন। যেখানেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে, সেখানেই তিনি সেবা করেছেন, বলেন ফাদার জেমস ।’
ফাদার পিশোতোর সাথে স্মরণীয় ঘটনার কথা উল্লেখ করে ফাদার জেমস বলেন, ‘আমার সাথে তাঁর অভিজ্ঞতা হয়েছে ১৯৮৮ সনে, আমি নটর ডেম কলেজ থেকে প্রতিদিন ১৬ শত বন্যার্ত মানুষকে খাবার দিয়েছি। এ ছাড়া তিনি মানিকগঞ্জে একটি গ্রামে বেড়ার ঘরে আমার সাথে এক মাস থেকে বন্যার্তদের সেবা দিয়েছেন। তিনি মানুষের প্রয়োজনে সাড়া দিয়েছেন।’
ফাদার জেমস উল্লেখ করেন যে মণ্ডলীতে আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন আমেরিকা থেকে ছুটে আসা নিবেদিত প্রাণ এই মিশনারি। ফাদার পিশোতো সেমিনারীয়ানদের শিক্ষায় ও গঠনে সাহায্য করেছেন। অনেক সেমিনারীয়ান যারা খরচ দিতে পারেননি, তিনি তাদেরকে শিক্ষায় ও গঠনে সাহায্য করতেন। এই ব্যাপারে তাঁর পিতামাতা তাকে সাহায্য করেছেন। এই কাজটি বাংলাদেশ মণ্ডলীর জন্য একান্ত প্রয়োজন ছিল এবং এখনো আছে বলেন মনে করেন ফাদার জেমস।
ফাদার জেমস বলেন, ‘তিনি তাঁর সারা জীবন এই দেশের জন্য ব্যয় করেছেন, আমরা তাঁর জীবনাহ্বানের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি একজন আদর্শ মিশনারি ছিলেন। তিনি যেকোনো কাজ করতে প্রস্তুত ছিলেন। যেকোনো দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হতো না কেন, তিনি বাধ্যতা ও নম্রতার সাথে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। আজ তাঁর বিদায়লগ্নে তাঁর পিতা-মাতা ও তাঁর স্বজনদের কৃতজ্ঞতা জানাই, যাঁরা তাঁকে মণ্ডলীর জন্য কাজ করতে দিয়েছিলেন।’
এ ছাড়াও তিনি সম্প্রদায়ের হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফাদার প্যাট্রিক গমেজ বলেন, ‘ফাদার যোসেফ পিশাতো, সিএসসি ছিলেন একজন আদর্শ ব্যক্তি, খাঁটি পুরোহিত, একজন ব্রতধারী, মিশুক, বাংলার মাটিকে তিনি এতই ভালবেসেছিলেন যে, তিনি প্রকাশ করেছেন এক আন্তঃধর্মীয় অন্তর। প্রকৃত অর্থে মিশনারী। হাজারো জনের শিক্ষা-গুরু শুধু ক্লাসরুমে নয়, জীবন সাক্ষ্যে।’
৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় তেজগাঁও চার্চে খ্রিষ্টযাগ শেষে সকাল ১১টায় তাঁকে ভাদুন সেন্টারে সমাধিস্থ করা হবে। আমরা তার আত্নার চির শান্তি কামনা করি।
Add new comment