Radio Veritas Asia Buick St., Fairview Park, Queszon City, Metro Manila. 1106 Philippines | + 632 9390011-15 | +6329390011-15
বান্দরবান ফাতিমা রাণী কাথলিক ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হলো লাউদাতো সি বর্ষ উপলক্ষে বিশেষ সেমিনার
পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিসের সার্বজনীন পত্র লাউদাতো সি (তোমার প্রশংসা হোক)-এর পঞ্চবার্ষিকী এবং বিশেষ বর্ষ উপলক্ষে বান্দরবান ফাতিমা রাণী কাথলিক ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হলো দুইদিন ব্যাপী এক বিশেষ সেমিনার।
বান্দরবান ধর্মপল্লীর সকল খ্রীষ্টভক্তগণই প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। তারা জুম চাষ, বিভিন্ন সবজী চাষ ও ফলের বাগান করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
তারা খাবার পানীয় জন্য নির্ভর করেন ঝিড়ি বা ঝর্ণার জলের উপর। তাই ঈশ্বরের এই অপরূপ সৃষ্টির প্রতি যেন তারা আরো যত্নবান হয় এবং সৃষ্টিকে রক্ষা করার মধ্য দিয়ে যেন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য আবাসস্থল উপহার দিয়ে যেতে পারেন এই সচেতনতা সবার মধ্যে জাগ্রত করাই ছিল এই সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য।
উক্ত সেমিনারে মূল বক্তা মি. মানিক উইলভার ডি’কস্তা, পালকীয় সমন্বয়কারী, চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিস; মূলভাবের উপর খুব সহজ-সরল ভাষায় তার উপস্থাপন তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর হচ্ছেন সবচেয়ে বড় স্থাপত্যশিল্পী। তিনি জানেন কোন্ এলাকার জনগণের জন্য কি প্রয়োজন এবং প্রয়োজন অনুসারে তিনি সবকিছু সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছেন বা সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে এর মধ্য মানুষ তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারেন এবং জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, মানুষ অন্যায় করলে ঈশ্বর ক্ষমা করেন কিন্তু প্রকৃতি কখনোই ক্ষমা করে না: আমরা যদি প্রকৃতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিই তাহলে আমাদেরও ধ্বংস অনিবার্য। তাই আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে ঈশ্বরের এই অনিন্দ্যসুন্দর সৃষ্টির যত্নের প্রতি আরো সচেতন হতে হবে।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারী মিস্ সাথেরুং ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা প্রকৃতির মাঝে বাস করি, প্রকৃতির দে’য়া দান দিয়ে জীবন নির্বাহ করি। কিন্তু প্রকৃতির মাঝে ঈশ্বরের উপস্থিতির ব্যাপারে আমি কখনোই সচেতন ছিলাম না। তাই এই সেমিনারের মধ্য দিয়ে আমি প্রকৃতির যত্নের ব্যাপারে আরো সচেতন হব আর এই সুন্দর সৃষ্টির জন্য সর্বদা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাব।
অংশগ্রহণকারী মিষ্টার দেবাশীষ ত্রিপুরা বলেন,‘আগে নদীতে, ঝিড়িতে অনেক মাছ, কাঁকড়া পাওয়া যেত। বনের গাছগুলোতে ফলের কোন অভাব ছিল না। রৌদ্রে/গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বড় বড় গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে পারতাম। কিন্তু এখন আর তা নাই বলতে গেলেই চলে। এগুলোর জন্য আমরাই দায়ী।
তিনি আরো বলেন, নিজেদের লোভের কারণে বড় বড় গাছ কেটে ফেলছি, পাহাড় ধ্বংস করছি, ঔষধ বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে নদী থেকে মাছ ধরছি যার ফলে অনেক মাছের পোনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে পরিবেশ আজ বিপন্ন। আগে ঘরে কোন খাবার না থাকলে আমি জংগলে গিয়ে বিভিন্ন সবজী বা আলু সংগ্রহ করে খেতে পারতাম কিন্তু এখন আর তা পাই না। এগুলো রক্ষা করার ব্যাপারে আমি নিজেও সচেতন ছিলাম না। তাই এই সেমিনার আমাকে এখন থেকে সচেতন হতে অনুপ্রাণিত করেছে।
ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার বিনয় সেবাষ্টিয়ান গমেজ, সিএসসি বলেন, ‘বান্দরবান জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় যাওয়ার আমার সুযোগ হয়েছে এবং অনেক বয়স্ক লোকদের সাথে আলাপও করেছি। তাদের মুখ থেকে এখানকার প্রকৃতির যে বর্ণণা শুনেছি বলতে গেলে তা আজ বিলুপ্তপ্রায়।
বর্তমানে জংগলে হরিণ, শুকর, বন মোরগ, খরগোশ, ভাল্লুক প্রভৃতি প্রাণীর সংখ্যা খুবই সীমিত হয়ে পড়েছে। বড় বড় গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বা ইট ভাটিতে পোড়ানো হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এখানে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই বিভিন্ন দিক চিন্তা করে সবাইকে এখনই সচেতন করার লক্ষ্যে উক্ত সেমিনারের আয়োজন করেছি।
ফাদার বিনয় আরো বলেন, আশা করি এই সেমিনার সবার জন্যই ভাল ফল বয়ে আনবে। অংশগ্রহণ কারীগনও সৃষ্টির প্রতি আরো যত্নশীল হওয়ার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞা করেছেন যার ফলে এই সেমিনার সার্থক হয়েছে বলে আমি মনে করি। সেই সাথে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
উক্ত সেমিনারে ধর্মপল্লীর বিভিন্ন গ্রামের ১১০ জন শিক্ষক, বাণী প্রচারক ও কারবারী (গ্রাম প্রধান) অংশগ্রহণ করেন।
Add new comment