পশ্চিমবঙ্গে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বাচ্চাদের অদ্ভুত জ্বর

পশ্চিমবঙ্গে হটাৎ করেই শিশুদের মধ্যে অদ্ভুত এক জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে মারা গিয়েছে বেশ কিছু শিশু, হাসপাতালে ভর্তি আছে শতাধিক। এই জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের জেলাগুলিতে। চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছে অবিবাভকদের কপালে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর জেনেছে বর্তমানে অজানা জ্বরের প্রধান কারণ হল আরএস ভাইরাস। এই আরএস ভাইরাসের পুরো নাম ‘রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস’। করোনার মতো এটিও একটি আরএনএ ভাইরাস। বর্তমানে এই ভাইরাস নিয়ে এত আলোচনা হলেও, এই জীবাণু কিন্তু নতুন কিছু নয়। বছর বছর এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। তফাত শুধু এবার এই ভাইরাসের সংক্রমণের হার কিছুটা বেশি বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। 
 

যে কোনও বয়সের মানুষই এই ভাইরাস সংক্রমণের কবলে পড়তে পারেন। তবে শিশুরাই মূলত এই ভাইরাসে বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হয়। একটু বড় বয়সের বাচ্চাদের এই জীবাণু থেকে তেমন কোনও সমস্যা হয় না বললেই চলে। কিন্তু দুই বছর বয়সের নীচের শিশুর এই সংক্রমণ জটিল স্তরে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা সবথেকে বেশি। আরএস ভাইরাস খুবই সংক্রামক। এই ভাইরাসটি সাধারণত আক্রান্তের হাঁচি, কাশি বা কথা বলার সময় মুখ থেকে বেরিয়ে আসা তরলবিন্দু বা ড্রপলেট থেকে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এবার সেই তরলবিন্দু কোনও কারণে সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে মানুষটি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। 

আরএস ভাইরাসের কবলে পড়লে সাধারণত আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে সংক্রমণ হয়। উপসর্গ থাকে মৃদু থেকে মাঝারি। জ্বর থাকে। শরীরের তাপমাত্রা ১০২, ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। সঙ্গে সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, কান ব্যথা থাকতে পারে। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসনালীর নীচের অংশে সংক্রমণ ছড়ায়। এই অংশ অর্থাৎ লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে সংক্রমণ পৌঁছালে ব্রঙ্কিওলাইটিস, নিউমোনিয়া হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, বুকে কফ জমে ঘড়ঘড় শব্দ, অবিরাম কাশি ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা যায়। 

এই রোগের উপসর্গ মৃদু থেকে মাঝারি হলে প্রাথমিকভাবে বাড়িতে রেখেই লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করতে হয়। এই সময়ে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিঅ্যালার্জিক জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। যে কোনও ভাইরাল জ্বরের মতো আরএস ভাইরাস সংক্রমণেও বাচ্চার শরীরে জলের ঘাটতি (ডিহাইড্রেশন) হতে পারে। তাই ওষুধের পাশাপাশি বাচ্চাকে পরিমাণ মতো জল, জ্যুস ইত্যাদি পান করাতে হয়। এই কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলেই শিশুর সমস্যা মোটামুটি পাঁচ থেকে দশ দিনের মধ্যে কমে যায়। অপরদিকে বাচ্চা খাচ্ছে না, জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে, অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৫-এর নীচে নেমেছে, প্রস্রাব কমে গিয়েছে, অচেতন হয়ে যাচ্ছে, নেতিয়ে পড়ছে— ইত্যাদি যে কোনও একটি উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। হাসপাতালে জেনারেল ওয়ার্ডে ভর্তি করে অক্সিজেন, নেবুলাইজার, আইভি ফ্লুইড দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিকও দিতে হতে পারে। তবে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটা নেমে গেলে তখন বাচ্চাকে নিকু, পিকুতে (আইসিইউ) ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হবে আর দেরী না করে।

এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে এমন কোনও টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। রোগ প্রতিরোধে সচেতনতাই হাতিয়ার। বাড়ির বড়রা এবং একটু বড় বাচ্চাদের নিয়মিত হাত ধোয়া, স্যানিটাইজ করা, মাস্ক পরার অভ্যেস চালিয়ে যেতে হবে। বাড়িতে কারও সর্দি-কাশি হলে নিজেকে আলাদা করে নিন। এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই মোটামুটি এই রোগ থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখা সম্ভব।  

মনে রাখবেন, খুব ছোট বাচ্চার সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে দ্রুত অবস্থার অবনতি হতে পারে। তাই শিশুর জ্বর, সর্দি, কাশির মতো লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমেই সতর্ক হন। চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রতিবেদন – অতনু দাস।

 

Website: https://bengali.rvasia.org

YouTube: http://youtube.com/veritasbangla

Add new comment

2 + 1 =