চির বিদায় খ্রিস্টিয় সঙ্গীতের গুণী শিল্পী নিপু গাঙ্গুলীর

খ্রিস্টিয় সঙ্গীতের গুণী শিল্পী নিপু গাঙ্গুলী

গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ খ্রিস্টাব্দে, অপ্রত্যাশিতভাবে চলে গেলেন আমাদের সবার প্রিয় মানুষ সঙ্গীতশিল্পী  নিপু গাঙ্গুলী। সঙ্গীতের উজ্জ্বল তারকা, একজন অত্যন্ত গুণী শিল্পী, সঙ্গীতকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক।  

আধুনিক গান, ধর্মীয় গান, ভজন, গজল- সব ক্ষেতেই ছিল তার প্রত্যয়ী বিচরণ।  অত্যন্ত সুকণ্ঠের অধিকারী। তরুণ বয়সেই  সঙ্গীতের সাথে আত্মার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল, আর তাই  সঙ্গীতকে  ভালবেসে জীবনের দীর্ঘ  পথচলায়  বিগত পাঁচ দশকে অসংখ্য গান  গেয়ে শ্রোতা-দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি।

অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরও করেছেন,  বিশেষ করে ধর্মীয় সঙ্গীতে রয়েছে তার বিরাট অবদান, অসংখ্য জনপ্রিয় ধর্মীয় সঙ্গীতের  স্রষ্টা তিনি- বাণীদীপ্তি থেকে তাঁর  রেকর্ডকৃত গানগুলো আজও  বাজে আমাদের ঘরে ঘরে, আজও  গাওয়া হয় গীর্জায় বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে কিংবা রবিবারের মিশায়।

তিনি মান্নাদে, শ্যামল মিত্র বা অন্য জনপ্রিয় শিল্পীদের গানগুলো অসম্ভব চমৎকার করে গাইতেন! হারমোনিয়ামের রীডের উপর যেন এক ভিন্ন শিল্পকর্মের সৃষ্টি  হতো তাঁর অঙ্গুলি সঞ্চালনে আর কণ্ঠে খেলা করে যেত সুরের রঙধনু ।  

তার সম্পর্কে একজন বলেন, আমার সৌভাগ্য যে তিনি আমার কয়েকটি গানে সুর দিয়েছিলেন, ক্লাবের নাটক এবং বড়োদিনের গানে। গাঙ্গুলী বাড়িতে ঘরের ভিতরে সন্ধ্যার আবছায়া আলোতে তিনি হারমোনিয়ামে গুন গুন করে সুর তুলছেন, কথাগুলো একে একে বসে যাচ্ছে তাঁর সুরের রেখায়, দু'ঘন্টার মধ্যে গানের  সুরারোপ প্রস্তুত-  সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা, এক অনন্য অনুভূতি! 

তাঁর  কণ্ঠ আজও কানে বাঁজে, ফেলে আসা সেই সব দিনগুলো...... সঙ্গীত আসরের সেই সব মুহূর্তগুলো যেন চোখের সামনে ভাসছে। অসংখ্যবার অসংখ্য সঙ্গীত আসরে তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়েছি। সে সময়ে তাঁর গান শোনার জন্য ভিড়  লেগে যেত যে কোন আসরে। আজও সেসব দিনগুলো স্মৃতিতে ভাসমান! 

তিনি শুধু একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নয়, ব্যক্তি জীবনেও ছিলেন অত্যন্ত প্রাণখোলা সদালাপী মানুষ। সমাজ থেকে শুরু করে সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংগীত, জীবনের অভিজ্ঞতা, দেশে-প্রবাসের বিরাজমান পরিবেশ পরিস্থিতি-  সব কিছু নিয়ে কথা বলতে, আলোচনা করতে পছন্দ করতেন।

আত্মপ্রত্যয়ী, নির্ভীক, স্পষ্টবাদী একজন ভিন্ন মানুষ ছিলেন তিনি । ওপারে অনেক ভালো থেকো, স্বর্গীয় আনন্দে আলোকিত হোক তোমার অনন্ত জীবন!   

Add new comment

14 + 2 =