গলছে হিমবাহ, বাড়বে তাপপ্রবাহ। উষ্ণতা বাড়বে কলকাতার

হুদহুদ, উম-পুন, যশের মতো ঘূর্ণিঝড় কিংবা চামোলির মতো হিমবাহ ধস আরও বাড়তে পারে। প্রবল বর্ষণে নিয়মিত ভাসতে পারে পাটনা, মুম্বই এমনকী রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চলও। বছরভর তাপপ্রবাহ বইতে পারে খোদ কলকাতাতেও। একইসঙ্গে বন্যার ভ্রুকূটির মধ্যে রয়েছে কলকাতা সহ দেশের ছ’টি উপকূলবর্তী শহর। প্রকৃতপক্ষে আগামী কয়েক দশকে এই ছবি দেখা যেতে পারে গোটা উপমহাদেশেই।

 

সোমবার (০৯ অগাস্ট ২০২১) বিস্ফোরক রিপোর্ট প্রকাশ করে এমনই আশঙ্কার কথা শোনাল রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিবেশ সংক্রান্ত ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৬৮ বছরে কলকাতার বাতাসের গড় বার্ষিক উষ্ণতা ২.৬ ডিগ্রি বেড়েছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির নিরিখে কলকাতাই শীর্ষে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমগ্র পৃথিবীর তাপমাত্রাই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে এক ভয়ঙ্কর সঙ্কটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে গোটা মানবজাতি। বিপদ কতটা মারাত্মক, তা বোঝাতে একে ‘কোড রেড’ তকমা দিয়েছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেইরেস স্বয়ং। ভারত সহ মোট ১৯৫টি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রসঙ্ঘের ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)। এদিনই তাদের ষষ্ঠ মূল্যায়ন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে—বর্তমানে গোটা পৃথিবীতেই তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী ১০-২০ বছরের মধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা অন্তত দেড় ডিগ্রি বেড়ে যাবে। জলবায়ুর এই ব্যাপক পরিবর্তনে সমুদ্রের জলস্তরও বিপদজনক হারে বাড়ছে। রিপোর্টে পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়েছে, ১৯০১ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বছরপ্রতি ১.৩ মিটার করে বেড়েছিল। আর ২০০৬ থেকে ২০১৮-র মধ্যে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, ৩.৭ মিলিমিটার। ভারত ও সংলগ্ন উপমহাদেশ নিয়ে রিপোর্টে আলাদা করে ‘সতর্কবার্তা’ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বলা হয়েছে, অতীতের তুলনায় গোটা একবিংশ শতাব্দী জুড়ে আরও নিয়মিত হয়ে উঠবে তাপপ্রবাহ। গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব বাড়বে, কমবে শীতকালের পরিধি। প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও কৃষিকাজে। বিশ্বের বড় শহরগুলি সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহের কবলে পড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে।

 

পাশাপাশি ভারী বর্ষণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো কারণের ফলে চেন্নাই, কোচি, কলকাতার মতো দেশের উপকূলবর্তী শহরগুলিতে ঘন ঘন বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে। পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তার আঁচ অবশ্য ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছে বাণিজ্যনগরী মুম্বই। এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কল জানান, গোটা বিশ্বের তুলনায় ভারত মহাসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বাড়বে সাইক্লোনের তীব্রতা। ইতিমধ্যেই আরব সাগরে সৃষ্ট সাইক্লোনের সংখ্যা অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আবার ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে সৃষ্ট বন্যার প্রবণতা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব পড়বে হিমালয় সহ বিশ্বের বিভিন্ন পর্বতমালাতেও। হিমবাহগুলি গলে জলস্তর বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির পাশাপাশি পানীয় জলের সঙ্কটও দেখা দিতে পারে। তবে কার্বন ডাই অক্সাইড সহ অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে পারলে, পরিস্থিতি বদলাতে পারে। চলতি বছরের শেষে ব্রিটেনের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স। আইপিসিসি-র দাবি, ওই সম্মেলনেই যদি রাষ্ট্রনেতারা এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপের অঙ্গীকার করেন, তাহলে আগামী দু’-তিন দশকের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসবে। কমবে বায়ুদূষণও। প্রতিবেদন – অতনু দাস।  

 

Website: https://bengali.rvasia.org

YouTube: http://youtube.com/veritasbangla

Add new comment

7 + 4 =