আজ ২৬ জানুয়ারি দেশের ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস

আজ দেশের ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস

নেতাজি জন্মজয়ন্তীর পরপরই ক্যালেন্ডারে যে দিনটাকে ঘিরে দেশাত্মবোধক আবেগ জাগ্রত হয় প্রত্যেক ভারতীয়র মনে, সেটি হল ২৬ জানুয়ারি। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান, কুচকাওয়াজের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাসের ছবি ভেসে আসে।

নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা-প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day) ঘিরে সেজে ওঠে দেশের সকল প্রান্ত। কিন্তু , এই দিনটার গুরুত্ব কী? এই দিনটির নেপথ্যে কী ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে?

ছিল স্বাধীনতা দিবস, হল প্রজাতন্ত্র দিবস। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ নাম হল সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র । ভারতে সাধারণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখে ভারত শাসনের জন্য ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের পরিবর্তে ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করে। এটি ভারতের একটি জাতীয় দিবস।

১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় গণপরিষদ সংবিধান কার্যকরী হলে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। কার্যকরী হওয়ার ঠিক দুই মাস আগে, ১৯৪৯ খ্রিঃ ২৬ নভেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক ভারতের সংবিধান অনুমোদিত হয়।

২৬ জানুয়ারি দিনটিকে সংবিধান কার্যকর করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ ১৯৩০ খ্রিঃ ঐ একই দিনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক পূর্ণ স্বরাজের সংকল্প ঘোষিত ও গৃহীত হয়েছিল।এই দিনটি ভারতের তিনটি জাতীয় দিবসের অন্যতম। অন্য দু'টি জাতীয় দিবস যথাক্রমে স্বাধীনতা দিবস ও গান্ধী জয়ন্তী। 

এই দিনটিকে জাতীর জনক মহাত্মা গান্ধী নাম দিয়েছিলেন, 'স্বতন্ত্রতা সংকল্প দিবস'। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ১৯২৯ সালের বর্ষশেষে পূর্ণ স্বরাজ আনার শপথের পরই ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

পরে, প্রায় দুশো বছরের ব্রিটিশ শাসনের পরাধীনতা ঘুচিয়ে ভারত যখন ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা অর্জন করল, তখন সে দিনটিই স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা পেয়ে গেল। এরফলে ২৬ জানুয়ারি তারিখের অভিধাও বদলে গেল।

স্বাধীনতার প্রায় আড়াই বছর পর তৈরি হল দেশের সংবিধান। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি কার্যকর করা হল দেশের সংবিধান। সেই সূত্র ধরেই ২৬ জানুয়ারিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হল।

কিন্তু এই প্রজাতন্ত্র দিবস সম্পর্কে আমাদের ধারণা কতটা? কেন ২৬ জানুয়ারিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে প্রজাতন্ত্র দিবসের জন্য? আর স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে প্রজাতন্ত্র দিবসের পার্থক্যই বা কী? এই সব কিছু খুঁটিনাটিই জেনে নিন। জানুয়ারিই কেন আমরা প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করি?

১৯৫০ সালে দেশের সংবিধান তৈরি হওয়ার পর, তা কার্যকর করতে একটি দিনের প্রয়োজন ছিল। আর তখনই ঐতিহাসিক মাহাত্ম্যের বিচারে বেছে নেওয়া হয় ২৬ জানুয়ারিকেই। এই কারণেই ২৬ জানুয়ারি পরিচিত হতে শুরু করল ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে।

এই বছর ভারতে কত তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হবে? চলতি বছরে দেশ ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করবে। প্রজাতন্ত্র দিবস আর স্বাধীনতা দিবসের মধ্যে কী পার্থক্য?

১৯২৯-এর বর্ষশেষে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে 'পূর্ণ স্বরাজ' আনার শপথ ঘোষণার পর ১৯৩০ সাল থেকে ২৬ জানুয়ারিকেই স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে ঔপনিবেশিক শাসনের শিকল ভেঙে ভারত যেদিন বাস্তবেই স্বাধীনতার মুখ দেখল- সেইদিন ঘটনাচক্রে ছিল ১৫ অগাস্ট। যার ফলে পালটে গিয়েছিল ২৬ জানুয়ারির গুরুত্বও।

প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কি গোটা দেশে ছুটি থাকে? হ্যাঁ। যে দিন থেকে এই দেশে প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হচ্ছে, ঠিক সেই দিন থেকে ২৬ জানুয়ারিকে জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ভারতের সর্বপ্রথম জাতীয় পতাকার রং কেমন ছিল? ১৯০৬ সালের ৭ অগাস্ট কলকাতায় প্রথম দেশের জাতীয় পতাকা উড়েছিল। আর সেই পতাকার রং ছিল লাল, হলুদ আর সবুজ রঙের।

গেরুয়া, সাদা আর সবুজ রঙের জাতীয় পতাকা কী ভাবে হল? ১৯২১ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের পিঙ্গালি ভেনকাইয়া নামের এক ডিজাইনার মহাত্মা গান্ধীকে তেরঙা একটি পতাকা দেখান। সেই পতাকার সাদা রঙের উপরেও ছিল একটি চক্র। তা-ই পরবর্তী সময়ে হয় অশোক চক্র। আর সেই পতাকাই হয় দেশের জাতীয় পতাকা।

‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ কত সালে ভারতের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা লাভ করে?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ ১৯৫০ সালে ভারতের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা লাভ করে।

'বন্দে মা তরম' গানটি কত সালে, কোথায় প্রথম প্রকাশিত হয়? ১৮৮২ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের 'আনন্দমঠ' উপন্যাসে প্রথম এই গানটি প্রকাশিত হয়। রচনার অব্যবহিত পরে লেখক যদুভট্টকে গানটিতে সুরারোপ করার জন্য অনুরোধ করেন।

প্রতি বছরই প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে পদ্ম সম্মান প্রাপকদের নাম প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবারও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে প্রকাশ করা হয়েছে ২০২১–এর পদ্ম সম্মান প্রাপকের তালিকা।

সেই তালিকা অনুযায়ী, ২০২১ সালে পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন ৭ জন। পদ্মভূষণ পুরস্কারের তালিকায় নাম রয়েছে দশজনের। তবে, স্বাভাবিক কারণেই প্রতি বছর পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিকা দীর্ঘ থাকে। অন্যথা হয়নি এবারও। এবার পদ্মশ্রী প্রাপকের সংখ্যা ১০২ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাত বাঙালিও। তবে, এবার পদ্মবিভূষণ বা পদ্মভূষণ আসছে না বাংলার ঘরে।

শিল্পজগতে অবদানের জন্য সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথ, শান্তিপুরের তাঁতশিল্পী বীরেনকুমার বসাক, ক্রীড়াবিভাগ থেকে টেবিল টেনিস খেলোয়ার মৌমা দাস, সমাজকল্যাণের জন্য কমলি সোরেন, সাহিত্য ও শিক্ষায় '‌পদ্মশ্রী' পুরস্কারে সম্মানিত হচ্ছেন ধর্মনারায়ণ বর্মা, সুজিত চট্টোপাধ্যায় ও জগদীশচন্দ্র হালদার।

মাত্র দু'টাকায় ৩০০ পড়ুয়াকে পড়ানোর জন্য 'সদাই ফকিরের পাঠাশালা' খুলেছেন সুজিত বাবু। কামতাপুরী ভাষার প্রসারে বিশেষ অবদান রেখেছেন ধর্মনারায়ণ বর্মা। এদিন বাংলার সম্মান প্রাপকদের তালিকা ট্যুইটারে শেয়ার করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও।- তথ্য সংগ্রহে: ফাদার সৌমিএ মাখাল, সহায়ক উইকোপিডিয়া  

 

Add new comment

11 + 5 =