অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসকরণে বিশ^ অর্থনীতি নেতৃবৃন্দের প্রতি পোপের আহ্বান

দরিদ্র মানুষ, যারা উদাসীন বিশ^ায়নের কারণে পশ্চাৎপদগ্রস্থ, তাদের চাহিদাসমূহকে প্রাধান্য দিয়ে আয় বৈষম্য উর্ধ্বগতিকে কমিয়ে আনার জন্য পোপ ফ্রান্সিস বিশে^র অর্থনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ^ নেতৃবৃন্দের মধ্যে যারা বিগত ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২০ খ্রিস্টাব্দে ভাতিকানের  কর্মশালায় অংশগ্রহন করেছেন তাদের মধ্যে ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, প্যারাগুয়ে এবং এল সালভাদোর এর অর্থমন্ত্রীগণ; একজন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, এবং আর্ন্তজাতিক অর্থ তহবিল এর পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

নতুন ধারার সংহতি” শীর্ষক এই কর্মশালাটি পোপীয় সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হয়।

এই কর্মশালার্টি বিশে^র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তাদের জন্য ফোরাম আয়োজন করে “অন্তভুক্তি, সংমিশ্রণ এবং সৃষ্টিশীল বা নতুনত্ব” প্রক্রিয়ায় আয় বৃদ্ধির বৈষম্যতা বিষয়ে আলোচনার অবতারণা করে।

পোপ ফ্রান্সিস, অংশগ্রহনকারীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বক্তব্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কতিপয় লুকায়িত বিপদ বা সমস্যার কথা ব্যক্ত করেন; সেই সাথে ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরীর ক্ষেত্রে কতিপয় দিক নির্দেশনাও প্রদান করেন।

পোপ বলেন, “জগৎটা ধনী বা সম্পদে সমৃদ্ধ; তারপরও আমাদের চারপাশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিই পাচ্ছে; শত শত লক্ষ মানুষ অতি দারিদ্রতায় জর্জরিত। তারা খাদ্য, গৃহ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বিদ্যুত ও সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। দারিদ্রতার বিভিন্ন কারণে এই বছর প্রায় ৫ (পাঁচ) মিলিয়ন শিশু মৃত্যুবরণ করবে।”

পোপ ফ্রান্সিস আরো বলেন যে, আয় বৈষম্য বৃদ্ধি লক্ষাধিক মানুষকে জোড়পূর্বক শ্রম, পতিতাবৃত্তি এবং মানব অঙ্গ পাচারের মতো অনৈতিক কাজে লিপ্ত করছে।

পোপ ফ্রান্সিস আরো বলেন অতি দারিদ্রতা কিভাবে সম্পদশালীতার মাঝে তার অস্তিÍত্বকে মানব ইতিহাসে টিকিয়ে রাখছে! 

বর্তমানে ৫০ জন সম্পদশালী ব্যক্তি প্রায় ২.২ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার সমপরিমাণ সম্পদ ভোগ করছে। পোপ বলেন যে, তারা নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাখাতে বিশে^র প্রত্যেকটি দরিদ্র শিশুকে রাজস্ব করের মাধ্যমে বা মানবপ্রীতির বসে অর্থ সাহায্য করতে পারত! আর এভাবে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ জীবন রক্ষায় অবদান রাখতে পারত!

পোপ মহোদয় সম্পদশালী ব্যক্তিদের জন্য কর বিরতিকে “পাপের কাঠামো” বলে নিন্দা জানিয়েছেন। প্রতি বছর শত শত মিলিয়ন ডলার যা কররূপে সংগ্রহ করা যেত এবং স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাখাতে অর্থায়ন করা যেত তা ড়ভভংযড়ৎব ধপপড়ঁহঃং হিসেবে নষ্ট হচ্ছে।

সমাধানের পথ হিসেবে পোপ মহোদয় বিশে^র অর্থনৈতিক নেতৃবৃন্দদের ভ্রাতৃত্ববোধ ও আস্থা সাধনে “সহ-দায়িত্বশীল” ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।   

তিনি বলেন, ব্যাংক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমুহের উচিত হবে সুবিধাবঞ্চিত জনগণকে এবং উন্নয়নশীল দেশসমুহকে সহায়তা দেওয়া যাতে তারা উন্নয়নের একটা পর্যায়ে পৌছতে পারে।

তিনি বলেন, সামাজিক প্রতিরক্ষা, মৌলিক আয়, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং সার্বজনীন শিক্ষা” হচ্ছে মানুষের “অর্থনৈতিক অধিকার” যা মানব সংহতি গঠনের ভিত্তিরূপে কাজ করে।

আমরা প্রভুর কাজে সহযোগী বা অংশীদারীদের স¦ীকৃতি দেওয়ার সুযোগটি উৎযাপন করি; যা প্রতিটি ব্যক্তির মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিশেষতঃ নিগৃহীতদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইতিহাসের গতিপথকে পরিবর্তন করতে পারে।

Add new comment

10 + 3 =