Radio Veritas Asia Buick St., Fairview Park, Queszon City, Metro Manila. 1106 Philippines | + 632 9390011-15 | +6329390011-15
উপদেশ ঐশকরুণার রবিবার ১৯ এপ্রিল, ২০২০
আজ পুনরুত্থানের পরবর্তী রবিবার। এই রবিবারটি বর্তমান মণ্ডলীতে “ঐশ করুণার রবিবার” বলে অভিহিত ও পালিত হচ্ছে। আজকের পার্বণ উপলক্ষে বাইবেল থেকে তিনটি পাঠ আমরা শুনলাম। শাস্ত্রপাঠগুলো শুনে আমাদের ধ্যান এরূপ হতে পারে:
যোহন রচিত মঙ্গলসমাচার পাঠে শুনেছি যে, শিষ্যেরা “যিশুর পুনরুত্থানের দিন, সেই রবিবারে সন্ধেবেলায়, ইহুদীনেতাদের ভয়ে, একটি ঘরের দরজাগুলো যদিও খিল দিয়ে বন্ধ করা ছিল, তবুও যিশু ভেতরে এলেন এবং তাঁদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। কবর শূণ্য ক’রে যিশু প্রবেশ করলেন ঘরে। তিনি তাঁদের বললেনঃ “তোমাদের শান্তি হোক”।
প্রিয়জনেরা, সারা বিশ্বে, মানুষ এবং আমরা প্রায় সবাই গৃহবন্দী হয়ে এই খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করছি। মহামারি করোনার আক্রমণে ও বিপর্যয়ে আমরা সবাই অনেক ভয়, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করতে পারি যে, পুনরুত্থিত প্রভু যীশুও আমাদের বদ্ধ ঘরে প্রবেশ ক’রে একই কথা আমাদের প্রতি উচ্চারণ করছেন: “তোমাদের শান্তি হোক”।
মঙ্গলসমাচার পাঠে আরও শুনেছি যে, পুনরুত্থানের দিন বারোজনার মধ্যে অন্যতম টমাস উপস্থিত ছিল না। অন্যেরা তাকে বলল “আমরা প্রভুকে দেখেছি”। কিন্তু টমাস বিশ্বাস করতে চাইলো না। টমাস বলল: আমি যদি তাঁর হাতে-পায়ে পেরেকের দাগ না দেখি, এবং তাঁর বুকের পাশটিতে যদি হাত দিতে না পারি, তবে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করব না।
পুনরুত্থানের আটদিন পর, যীশু আবার সেই বদ্ধ ঘরে প্রবেশ করলেন। এবার টমাসও উপস্থিত ছিল। এবারেও যিশু বললেন: “তোমাদের শান্তি হোক”। আর বললেন, “টমাস এবারে তোমার হাত বাড়াও, আমার বুকের পাশটিতে হাত দাও। আর অবিশ্বাসী থেকো না, বিশ্বাসী হও।” বুকের ক্ষতের মধ্যে হাত রেখে টমাস পুনরুত্থিত প্রভু যিশুকে চিনল, আর এই বলে বিশ্বাস প্রকাশ করল: “প্রভু আমার, ঈশ্বর আমার”। দেহের ও বুকের ক্ষতের মধ্যে হাত রাখার পর টমাস বিশ্বাসী হল।
প্রিয়জনেরা, করোনা মহামারীর কারণে কতভাবে ক্ষত-বিক্ষত এই পৃথিবী, দেশ ও সমাজের মানুষ, আমাদের পরিবার ও আপনজন। এই করুণ অবস্থায়, মহামারী করোনার দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতার মধ্যে, আমরাও আমাদের বদ্ধ ঘরের মধ্যে, পুনরুত্থিত প্রভু যীশুর আবির্ভাব করছেন এবং আমরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করছি। যিশুর বিদ্ধ বক্ষ থেকে বেরিয়ে আসছে ঐশকরুণার ধারা; এটা একদিকে আমাদের বিশ্বাস, আবার অন্যদিকে ঐশকরুণার জন্য আমাদের একান্ত আশাভরা প্রার্থনা। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে, ঐশকরুণা দিবসে, আমাদের বিশ্বাস ও আশাভরা প্রার্থনা হচ্ছে “যিশু, তুমিই আমার ভরসা”।
ঐশকরুণা বা ঐশ দয়ার রবিবারে, আমাদের কাছে এ আহ্বানও আসে: আমরা যেন ভালবাসা ও সেবার মধ্য দিয়ে অসুস্থ ও অভাবী মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করি। কৃতজ্ঞ আমরা সবার প্রতি, বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য জনসেবাকর্মীদের প্রতি যারা বিভিন্নভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছেন। অনেকে দয়া প্রদর্শন ক’রে অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তাদের সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
শিষ্যচরিত থেকে নেওয়া প্রথম শাস্ত্রপাঠে আদিমণ্ডলীর একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। খ্রিস্টানরা ঘরে বসে পুনরুত্থিত প্রভু যিশুর সাক্ষ্যদান করত, ঈশ্বরের বাণী শুনতো, ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমাজে জীবনযাপন করত, তারা বাড়ীতে রুটি-ছেঁড়া অনুষ্ঠানে, অর্থাৎ খ্রিস্টযাগে নিয়মিত যোগদান করত এবং প্রত্যেকের অভাব মেটানোর জন্য সমবায় তহবিল থেকে প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুসারে ভাগ করে নিত। পুনরুত্থানের সাক্ষি হয়ে এরূপভাবে আদিমণ্ডলী সাক্ষ্যদান করত। এ সবের মধ্য দিয়ে তারা আনন্দ ও সরলতার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করত। বর্তমান মুহূর্তেও আদিমণ্ডলীর জীবনযাত্রা আমাদেরকে প্রেরণা দান করে। এবং আমাদের পরিবারে ও সমাজে সেই একই সাক্ষ্যদান দেখছি।
প্রিয়জনেরা কয়েকদিন আগে, পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস বললেন: এই বিধ্বস্ত মহমারির মধ্যে তোমরা আনন্দে থাক। অবশ্য এ আনন্দ জাগতিক আনন্দ নয়। এ আনন্দ, মঙ্গলসমাচারের আনন্দ; মঙ্গলসমাচার অনুসাওে জীবনযাপন করার আনন্দ। এ আনন্দ আসে এই বিশ্বাস থেকে যে, পুনরুত্থিত প্রভু যিশু আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন; বদ্ধ ঘরে তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তাঁর বক্ষদেশ থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে ভালবাসা, ক্ষমা ও নবজীবনের অবারিত করুণার ধারা। আমাদের প্রতি বাণী উচ্চারিত হয়: “তোমাদের শান্তি হোক”। আর তাঁর ওপর বিশ্বাসভরে আমরাও বলি: “প্রভু আমার, ঈশ্বর আমার”। পুনরুত্থিত প্রভু যীশুর নিকট জীবন সমর্পণ করে বলি: “যিশু, তুমিই আমার ভরসা”। আজকের দ্বিতীয় পাঠে সাধু পলের কথা অনুসারে “প্রাণময় আশায় বুক বেঁধে”, আমরা জীবন যাপন করি। এ সবই মঙ্গলসমাচারের আনন্দের প্রকাশ।
প্রিয়জনেরা, এ আনন্দ পবিত্র আত্মার একটি দান। আনন্দে থাকার মানে হচ্ছে পবিত্র আত্মায় জীবন যাপন করা। বিশ্বাস ও ভরসা নিয়ে, আনন্দময় প্রত্যাশা নিয়ে, আসুন আমরা পবিত্র আত্মার অবতরণের প্রতীক্ষায় থাকি। পঞ্চাসত্তমী পর্বের আর ৪০ দিন মাত্র বাকী। পবিত্র আত্মার কাছে প্রার্থনা করি যেন, পবিত্র আত্মা আমাদের মাঝে “নতুন পৃথিবী ও নতুন স্বর্গ” সৃষ্টি করেন। আমেন ॥
উপদেশ: কাডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি (১৯ এপ্রিল, ২০২০)
Add new comment