কলকাতার চিঠি

প্রীতিভাজনেষু,

স্বাগত জানাই ‘কলকাতার চিঠিতে’। আশা করি ভালো আছেন।

'নবাব সিরাজ-উদ্-দোল্লা ও ফলতা ফোর্ট'।

কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ফলতা একটি ছোট গ্রাম।

১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা জলপথে ভারতের পশ্চিম উপকূলের কাছাকাছি কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছান। ভাস্কো দা গামার জন্যই ইউরোপীয়রা ভারতে আসার জলপথের সন্ধান পান। ফলতঃ পর্তুগিজ, ডাচ্, ইংরেজ, ফরাসী প্রভৃতি বণিক জাতি জলপথে ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ভারতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আসতে শুরু করে। এই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই হুগলি নদীর তীরবর্তী অনেক জায়গায় বিদেশী এই বণিক সম্প্রদায় বিভিন্ন নৌ-ঘাঁটি তৈরী করে। এই নৌ-ঘাঁটিগুলো বণিকেরা উৎপাদিত মাল সরবরাহ ও মজুত রাখার ক্ষেত্রে যেমন ব্যবহার করতো তেমনি আবার এখানে জলদস্যুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সৈন্য এবং অস্ত্র ও মজুত রাখতো। হুগলি নদীতে জাহাজ যাতায়াতের জন্য জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভর করতে হত, তাই অনেক সময়ই ভাটায় জল কমে গেলে বড় বড় বাণিজ্যিক জাহাজ নদীর চড়ায় আটকে পড়ত, আর তখন সেই নৌ-ঘাঁটিগুলোই হয়ে উঠত তাদের বিশ্রামাগার। ডাচেদের তৈরী একটা নৌ-ঘাঁটি ছিল এই ফলতাতে। পরবর্তীতে এটাই 'ফলতা ফোর্ট' (Voltha Fort) নামেও পরিচিত হয়। ইতিহাসের পাতা থেকে এর সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না।

এই নৌ-ঘাঁটি'র ভেতরের যে মূল কাঠামো সেটাই ফলতা ফোর্ট বা ফলতা দূর্গ নামে পরিচিত। এই দূর্গটির পশ্চিম দিকে হুগলি নদী, বাকি তিনদিক গভীর পরিখা দিয়ে ঘেরা, যার অস্তিত্ব এখনো লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই মনে করেন এই ফলতায় ডাচেদের একটি কারখানা ছিল। সেই কারখানার উৎপাদিত পণ্য জলপথে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের জন্যই তারা এই নৌ-ঘাঁটিটি তৈরী করেছিল। এই নৌ-ঘাঁটিটি ডাচ্ দের তৈরী হলেও বৃটিশদের কিছু নিদর্শনও এখানে পাওয়া গেছে।

ঐতিহাসিক দিক থেকেও এই ফোর্ট বা দূর্গের তাৎপর্য কিছু কম ছিল না। ১৭৫৬ সালের এপ্রিল মাসে বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁর মৃত্যু হলে তাঁর দৌহিত্র 'সিরাজ-উদ্-দোল্লা' মাত্র ২২ বছর বয়সে বাংলার মসনদে বসেন। মুঘল বাদশাহ ফারুকশিয়ারের ফরমানে 'ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি' তখন বাংলায় বিনাশুল্কে বাণিজ্যরত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আড়ালে তাদের কর্মচারীরা বিনাশুল্কে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু বাংলার বণিকরা মোটা শুল্ক দিয়েই বাণিজ্য করতে বাধ্য হয়, এতে সিরাজ অসন্তুষ্ট হন। উপরন্তু ইউরোপীয় কোম্পানিগুলি নানা ভাবে সিরাজকে উপেক্ষা ও অবমাননা করতে শুরু করলে অসন্তোষ চরমে পৌঁছায়। ক্রুদ্ধ সিরাজ ১৭৫৬ সালের জুন মাসে কলকাতায় ইংরেজদের ঘাঁটি 'ফোর্ট উইলিয়াম' আক্রমণ করেন এবং তা দখল করে ইংরেজদের ছত্রভঙ্গ করে ফেলেন।

সিরাজের কলকাতা আক্রমণে 'গভর্নর ড্রেক' সহ বহু ইংরেজ ও পর্তুগিজ পরিবার 'ডোডালি' জাহাজে চেপে কলকাতা থেকে পালিয়ে ডাচ্ দের তৈরী ফলতার এই ফোর্টে আশ্রয় নিয়েছিল। স্থানাভাবে বহু শরণার্থী মারাও গিয়েছিল। ফলতার এই ফোর্টে ডাচ্ কর্তৃক ইংরেজ ও পর্তুগিজদের আশ্রয় দেওয়া নবাব সিরাজ মেনে নিতে পারেননি, তাই কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ ফেরার সময় সিরাজ ডাচ্ বাণিজ্য ঘাঁটি চুঁচুড়া দখল করে নিয়েছিলেন। পরে জগৎ শেঠের কাছ থেকে চার লক্ষ টাকা ধার করে ডাচেরা চুঁচুড়াকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিল।

অপরদিকে কলকাতায় সিরাজের 'ফোর্ট উইলিয়াম' আক্রমণের কথা লর্ড ক্লাইভের কানে গেলে ক্লাইভ মাদ্রাজ থেকে ২০ শে ডিসেম্বর ১৭৫৬ সালে কলকাতা পুনর্দখলের জন্য আসেন এবং কিছু দিন 'ফলতার ফোর্টে' থাকেন। তাই ডাচ্ দের এই ফলতা ফোর্ট 'ক্লাইভ ফোর্ট ' নামেও পরিচিত।

ইতিহাস আরো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এই দুর্গটি দেখলে তবে বর্তমানে এই দূর্গটি প্রায় ভেঙে পড়া অবস্থায় আছে এবং সংরক্ষণের অভাব ও দেখা যায়।

সুন্দর হোক আপনাদের জীবন। ভালো থাকুন, সাবধানে সুস্থ থাকুন।

শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা সহ,

অতনু দাস।

(প্রযোজক)

রেডিও ভেরিতাস এশিয়া – বাংলা বিভাগ

চিত্রবাণী, কলকাতা।

আশা করি আপনাদের ভালো লাগলো আজ এই কলকাতার চিঠিটি পড়ে। আর পড়ে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি Like, Comment করবেন এবং আপনার facebook page এ Share করে দেবেন যাতে আপনার বন্ধুরা পড়তে এবং জানতে পারেন এই কলকাতার চিঠিটি। আপনার সহযোগিতা আমরা একান্তভাবে কামনা করছি।

Please Like, Comment and Share this Program.

#rvapastoralcare #RVASocialMedia2018 #4thRvaOnlineTraining #RVA #RadioVeritasAsia #RVA_BengaliService #chitrabani #চিএবাণী #FacebookPage #অতনু_দাস #Atanu_Das #কলকাতার_চিঠি #kolkatar_chithi #falta #s24pgs #ফলতা_ফোর্ট #faltafort #kolkata #letter #কলকাতা #চিঠি

Add new comment

6 + 13 =