Radio Veritas Asia Buick St., Fairview Park, Queszon City, Metro Manila. 1106 Philippines | + 632 9390011-15 | +6329390011-15
প্রভু যিশুর স্বর্গারোহন পর্ব -২০২০
যিশুর স্বর্গারোহন সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে যারা তাঁকে বিশ্বাস করে তারা পিতার রাজ্যে স্থান পাবে। স্বর্গ হচ্ছে পরম পিতার আবাসভূমি। ঈশ্বরের রাজ্য হচ্ছে ভালবাসার, সত্যের, ক্ষমার, মিলনের ও শান্তির রাজ্য। খ্রিস্ট তাঁর জীবন দিয়ে এই রাজ্যের সন্ধান দিয়েছেন ও পথ দেখিয়েছেন। ফলস্বরুপ ১ম পাঠে শুনলাম যে ... পরম পিতা তাঁর অসীম শক্তির মাহাত্ম্যে খ্রিস্টকে পুনরুত্থিত করেছেন এবং স্বর্গধামে নিজের ডানপাশেই তাঁকে বসিয়েছেন। তাঁকে দিয়েছেন ইহলোকে ও পরলোকের সমস্ত কিছুর উপর আধিপত্য, কর্তৃত্ব, শক্তি ও প্রভুত্ব। যে শক্তিতে যিশু পুনরুত্থিত হয়েছেন ও স্বর্গে প্রবেশ করেছেন, ২য় পাঠে, সেই একই শক্তি লাভের প্রতিশ্রুতি তিনি তাঁর অনুসারী/ বিশ্বাসীদের দিচ্ছেন ... পবিত্র আত্না তোমাদের উপর নেমে এলে তোমরা কিন্তু শক্তি লাভ করবে এবং পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত তোমরা আমার সাক্ষী হবে। মংগলসমাচারে যিশু নিজেই বলছেন, যাও, তোমরা গিয়ে সকল জাতির মানুষকে আমার শিষ্য কর, পিতা, পুএ, ও পবিত্রাত্মার নামে তাদের দীক্ষাস্নাত কর। তোমাদের যা কিছু আদেশ দিয়েছি, তাদের তা পালন করতে শেখাও। জেনে রাখ, জগতের শেষ দিন পর্যন্ত আমি সর্বদা তোমাদের সঙ্গে আছি। যিশুর আদেশ বা শিক্ষা অন্যদের জানাতে ও পালন করতে শিখানো আমাদের দায়িত্ব। আমাদের মিশন বা দায়িত্ব সহজেই হয়তো বুঝতে পারছি কিন্তু তা পালন করা বা কার্যকর করা কত কঠিন। অথচ এ দায়িত্ব পালনের গুণেই আমাদের স্বর্গসুখ বা অনন্তকালীন সুখের অধিকারী হওয়া, অন্যথায় চিরকালীন শাস্তি বা নরক যন্ত্রণা। আমরা নিজেরাই যদি যিশুর শিক্ষা ভালভাবে না জানি ও যথাযথভাবে পালন না করি তাহলে সন্তানদের ও অন্যদের কিভাবে শিখাবো বা জানাবো। পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, সাহস ধর, সামনে এগিয়ে যাও। প্রিয়জনেরা, বর্তমান সময়ে জগতের মানুষ যিশুকে ও প্রেরিতশিষ্যদের সশরীরে দেখে না কিন্তু আমাদের জীবন ও কাজ থেকে খ্রিস্টের শিষ্যদের প্রচারিত মঙ্গলবাণী শুনতে পারে, পাঠ করতে পারে। আমাদের প্রয়োজন সঠিক চেতনা, শক্তি ও সাহস যা পবিত্রাত্মা দান করে থাকেন। প্রয়োজন পবিত্রাত্মাকে নিজ জীবনে সক্রিয় ও জীবন্ত করে তোলা। প্রেরিতশিষ্যেরা যিশুর স্বর্গারোহণের পর উপরের একটি ঘরে সমবেত হয়ে একটানা ৯টি দিন পবিত্রাত্নার অপেক্ষায় প্রার্থনারত ছিলেন। নিয়মিত প্রার্থনায় আমরা ঈশ্বরের সামনে নিজেকে উপস্থিত করি, নতজানু হই বা নম্র থাকি, তাঁর সাথে কথা বলি যাতে তাঁর আত্মিক শক্তি লাভ করি। প্রার্থনায় স্থির থাকার গুণে ধীরে ধীরে অন্তরে প্রভুর শক্তি ও অনুগ্রহ অনুভব করি বা অভিজ্ঞতা করি ... অপরকে ভালবাসতে, ক্ষমা দিতে সক্ষম হই, পারস্পরিক বিশ্বাস দৃঢ়মূল হয়, একত্রে মিলেমিশে আনন্দে ও শান্তিতে বসবাস করার চেতনা পাই। আমাদের চিন্তাধারা ও জীবনধারা রুপান্তরিত হতে শুরু করে। গোটা মানুষটা যেন নবজন্ম লাভ করে। গেৎসিমানী বাগানে শিষ্যদের যিশু বিনীতভাবে বলেছিলেন জেগে থাক ও প্রার্থনা কর যাতে প্রলোভনে না পড়। কিন্তু শিষ্যেরা ঘুমাচ্ছিলো। আক্ষেপ করে যিশু বলেছেন, এক ঘন্টাও জেগে থাকতে পারলে না। অন্তরে ইচ্ছা আছে বটে কিন্তু দেহ দূর্বল। আমাদেরও অন্তরে ইচ্ছে আছে কিন্তু দেহ-মন কতইনা দূর্বল; তাই প্রয়োজন প্রভুর অনুগ্রহ ও শক্তি। নিয়মিত প্রার্থনা, খ্রিস্টযাগে যোগদান ও প্রভুর বাণী ধ্যানের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও শক্তি লাভ করতে সক্ষম হবো। পুরস্কারস্বরুপ যিশুর মাধ্যমে পিতার শক্তিতে আমরা স্বর্গ সুখের অধিকারী হবো। স্বর্গে যাওয়া মানে অনন্ত জীবনের অধিকারী হওয়া। অনন্ত জীবন হচ্ছে ঈশ্বর যিনি পিতা ও পুএ এবং পবিত্রাত্মা তাঁর সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে চিরকালের মত বাস করা। এই সম্পর্ক বর্তমান জীবন থেকেই শুরু হয় এবং চলমান থাকে চিরকালীনভাবে। এিব্যক্তির সাথে অনন্তকালীন সম্পর্কের বীজ আমাদের অন্তরে রোপিত হয়েছে বাপ্তিস্মের সময়। স্বর্গ লাভ করতে চাইলে এিব্যক্তির সাথে আমাদের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করা, বিশ্বাসকে বাড়িয়ে তোলা একান্ত আবশ্যক। তার একমাএ পথ প্রার্থনা .. খ্রিস্টযাগ হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনা যেখানে প্রভুর কাছে কৃত পাপের ক্ষমা পাই, প্রভুর বাণী শুনি, প্রভুর দেহ গ্রহন করি ও এিব্যক্তির আশীর্বাদ প্রাপ্ত হই। প্রিয়জনেরা আসুন সচেতনভাবে প্রভুর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রেখে প্রকৃত বিশ্বাসীরুপে জীবনযাপন করি, নিয়মিত প্রার্থনা করি, সক্রিয়ভাবে খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করি যাতে যিশুর মত করে আমরাও স্বর্গে যেতে পারি এবং ত্রিব্যক্তি ঈশ্বরের সাথে চিরকালীন ভালবাসায় বাস করতে পারি।
পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস ২৪ শে মে, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর যত্ন ও পরিবেশের উপর একটি সর্বজনীন পত্র লিখেছেন। পত্রটির নাম ‘লাউদাতো সি’ (খধঁফধঃড় ঝর), বাংলায় ‘তোমার প্রশংসা হোক’; যা বিশে^র সকল মানুষের প্রতি প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় জেগে ওঠার একটি আহ্বান। সর্বজনীন পত্রটি প্রকাশের পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে পোপ মহোদয় ‘লাউদাতো সি সপ্তাহ’ (মে ১৬-২৪, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ) পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। আজ তার শেষ দিন। এই আহ্বানের আসল উদ্দেশ্য হলো এই অভিন্ন বসতবাটি. আমাদের পৃথিবীর যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য যেন নিজেরা কিছু কিছু উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করি। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকর্মের যত্ন নেওয়া ও তা লালন ক’রে সৎ ও ধার্মিক জীবন যাপন করাই হচ্ছে আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য। পোপ ফ্রান্সিস স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন- মানুষ .. প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের প্রতি অনেক ক্ষতি করে চলেছে। ’পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে মনপরিবর্তন’ অপরিহার্য, যাতে চতুর্দিকের জগতের সাথে মানুষের সম্পর্ক সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সুতরাং মনপরিবর্তন প্রμিয়ায় ৬টি ধাপ অনুসরণ করতে আহ্বান জানাচ্ছেন: প্রথম ধাপ- ধীর স্থির অন্তরে সৃষ্টির মাঝে সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি উপলব্ধি করি; দ্বিতীয় ধাপ- অপরূপ প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করি; তৃতীয় ধাপ- ক্ষতবিক্ষত ধরিত্রীর ও বিপদাপন্ন দরিদ্র মানুষজন অবিরত কাঁদছে, তা অন্তরে শুনি; চতুর্থ ধাপ- অনুতপ্ত হৃদয়ে আমরা স্বীকার করি- আমরাই প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মূল কারণ; পঞ্চম ধাপ- সৃষ্টিকর্তার আহ্বান অন্তরে শুনি এবং সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ করি; ষষ্ঠ ধাপ- সুন্দর মনে সৃষ্টিকর্তার নিকট নিরন্তর প্রার্থনা করি। কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টভক্তদের আহ্বান জানাচ্ছেন যাতে আমরা এ উপলক্ষে বসতবাড়ী ও আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি; বাড়ী-ঘর ও পরিবেশ দূষণমুক্ত করি অর্থাৎ প্লাষ্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য মুক্ত রাখি এবং যে কোন ধরনের অপচয় রোধ করি। এভাবেই আমরা প্রভুর যথাযথ প্রশংসা করতে পারবো।
আজ বিশ্ব যোগাযোগ দিবস। পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিসের ৫৪তম বিশ্ব যোগাযোগ দিবসের বাণীটি মূলত ‘গল্প বলা’র বিষয়ে। তিনি বলেছেন : উত্তম সব গল্পে বিদ্যমান সত্যকে আমাদের নিজের করে নেয়া প্রয়োজন। যা গড়ে তোলে; যা আমাদের শিকড় ও শক্তিকে পুনঃআবিষ্কার করতে সাহায্য করে, যা একত্রে সামনে অগ্রসর হবার জন্য প্রয়োজন। ছোটবেলা থেকেই গল্পের ক্ষুধা অনুভব করি; সেগুলো আমাদের প্রত্যয় ও আচরণ গঠন করে। সব গল্পই উত্তম গল্প নয় এমন কতো গল্প আছে যা আমাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আমাদের প্রজ্ঞার প্রয়োজন যেন আমরা সুন্দর, সত্য ও উত্তম গল্পগুলোকে স্বাগতম জানাতে ও সৃষ্টি করতে পারি। বাইবেল হলো ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যকার মহা ভালবাসার গল্প। এর কেন্দ্রে দন্ডায়মান আছেন যিশু যার নিজের গল্প আমাদের জন্য ঈশ্বরের ভালবাসা এবং ঈশ্বরের জন্য আমাদের ভালবাসা উভয়ের পূর্ণতা নিয়ে আসে। যেহেতু ঈশ্বর গল্প হয়ে উঠেছিলেন, তাই প্রতিটি মানবিক গল্পই হলো কোন এক অর্থে একটি ঐশরিক গল্প। প্রভুকে আমাদের গল্প বলার অর্থ হলো আমাদের ও অন্যদের প্রতি তাঁর সহানুভূতিশীল ভালবাসার দৃষ্টিতে প্রবেশ করা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা ও কাজের বিবরণ গল্পের আকারে প্রভুর কাছে প্রকাশ পারি, যেসব ব্যক্তি ও পরিস্থিতি আমাদের জীবনকে পূর্ণ করে সেসব তার কাছে নিয়ে আসতে পারি। আমাদের সন্তানদের কাছে বিশ্বাসের গল্প শুনাই, গল্পে জীবনের সত্যকে জানাই, গল্পে প্রকৃত ভালবাসার পথ দেখাই যাতে আমাদের মানবিক গল্প হয়ে উঠে এক ঐশরিক গল্প । আমাদের জীবনের গল্প যেন তাদের জীবনের অংশ হয়ে যায়, তাদেরকে পরিবর্তন করে। ঈশ্বর মোশীকে রললেন “তাদের মাঝে আমার যে সমস্ত চিহ্ন দেখিয়ে দিয়েছি, তা যেন তুমি তোমার পুত্র ও পৌত্রের কাছে বর্ণনা করতে পার, ফলত তোমরা যেন জানতে পার যে, আমিই প্রভু ” (যাত্রাপ্স্তুক ১০:২)। যাত্রাপুস্তকের অভিজ্ঞতা আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরের সম্বন্ধে জ্ঞান প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হস্তান্তর করা হয় মূলতঃ ঈশ্বর কিভাবে নিজের উপস্থিতি ঘটিয়ে যান সেই গল্প বলার মধ্য দিয়ে। জীবনের ঈশ্বর জীবনের গল্পের মধ্য দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমরাও যেন সচেতনভাবে আমাদের প্রতিদিনের কথায় ও কাজে সর্বোপরি প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখি ... যাতে জীবন শেষে আমরা অনন্তকালীনভাবে ঈশ্বরের ভালবাসায় স্থান পেতে পারি বা সম্পর্কযুক্ত হয়ে বাস করতে পারি। ঈশ্বর আমাদের তাঁর স্বর্গীয় আর্শীবাদ দান করুন।
Add new comment