Radio Veritas Asia Buick St., Fairview Park, Queszon City, Metro Manila. 1106 Philippines | + 632 9390011-15 | +6329390011-15
পঞ্চাশত্তমী পর্ব - ২০২০
মানুষ জীবনে পরিবর্তন চায়, নতুনত্ব চায় .. উন্নতি করতে চায়। কেউ রুপের / চেহারার পরিবর্তন চায়, তাই প্রসাধনী ব্যবহার করে। কেউ পোষাকের/চুলের পরিবর্তন চায়, তাই নিত্য নতুন ডিজাইন/ সাজ। কেউ শিক্ষিত হতে চায়, তাই মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করে। কেউ জীবনে উন্নতি করতে চায়, তাই পরিশ্রম করে ও পরামর্শ নিয়ে চলে। কিছু পরিবর্তন/ উন্নতি জীবনকে মূল্যবান ও মর্যাদা সম্পন্ন করে তোলে, আবার কিছু পরিবর্তন জীবনকে মূল্যহীন করে রাখে।
ঈশ্বরও পরিবর্তনে আগ্রহী। লক্ষ্য করি, পঞ্চাশত্তমী পর্বে কি ঘটেছিলো .. ঈশ্বর অনেক মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করেছিলেন। প্রথমত: প্রেরিতশিষ্যদের জীবনে পরিবর্তন.. আমরা জানি যে শিষ্যেরা জানতো যিশু মুক্তিদাতা, তথাপি তাদের কত দ্বিধাদ্বন্দ্ব, তাদের বুঝতে কত কষ্ট, তারা কত ভীরু, যিশুর কথা প্রচার করার সাহস তাদের ছিলো না .. কিভাবে তা করবে যেহেতু তাদের কাছেই যিশুর শিক্ষা ও কাজ অস্পষ্ট ... তারপর এলো সেইদিন, যে দিন পবিত্র আত্মা তাদের উপর নেমে এলো ... পবিত্রাত্মায় পূর্ণ হয়ে তারা এমনভাবে কথা বলতে লাগলো যে লোকদের মনে কোন সন্দেহই জাগলো না যে শিষ্যেরা যিশুর শিক্ষা বুঝেনি। বরং লোকেরা মনোযোগ দিয়ে পিতরের কথা শুনলো ... এমনভাবে শুনলো যে ঐদিনই তিন হাজার মানুষ মন পরিবর্তন করে বিশ্বাসী হলো। সুতরাং দেখি যে পবিত্রাত্মাকে লাভের পর শিষ্যদের আমূল পরিবর্তন: তারা আর দ্বিধাদ্বন্ধে নেই বরং যিশুর কাজ ও শিক্ষা মানুষের মুক্তির জন্যই, এটা একেবারেই পরিষ্কার; তারা আর ভীত নন্ বরং পূর্ণ আস্থা ও সাহস নিয়ে দৃঢ়তার সাথে জনসমক্ষে কথা বলছে, সাক্ষ্য দিচ্ছে।
দ্বিতীয়ত: শ্রোতাদের জীবনে পরিবর্তন: পিতরের সাক্ষ্য শুনে তিন হাজার মানুষ বিশ্বাসী হলো এবং দীক্ষা নিলো। পবিত্রাত্মা লোকদের মনেরও পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। যিশুর বিষয়ে শুনে তারা মর্মাহত হলো; জানতে চাইলো যে তাদের এখন কি করা প্রয়োজন? পিতর তাদের আহ্বান জানালেন যেন তারা মন পরিবর্তন করে, পাপের ক্ষমা পাবার জন্য আগ্রহী হয় .. তবেই তারা পাবে সেই ঐশ দান, স্বয়ং পবিত্র আত্মাাকে (শিষ্য: ২:৩৭-৪১)। তিনি জোর দিয়ে বললেন, এই কুটিল যুগের কবল থেকে নিজেদের রক্ষা কর। পিতরের আহ্বানে তারা সাড়া দিয়ে দীক্ষাস্নাত হলো। দীক্ষাস্নাত জনগণ রুপে বর্তমান যুগের কুটিলতা থেকে আমরা কতটুকু মুক্ত বা নিজেদের রক্ষা করে চলছি; নাকি যুগের হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দিয়েছি। আমাদের কি করা উচিত? পবিত্রাত্মাই একমাত্র আমাদের পথ দেখাতে পারে, আমাদের মনের-অন্তরের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
বর্তমান জগতের ও মানুষের পরিবর্তন একান্ত আবশ্যক। বর্তমান সময়ের সংকট মানুষকে অসহায় করে দিয়েছে; মানুষকে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে নিজ স্বার্থ ও আত্নসুখে বিভোর থাকায় আমরা ঈশ্বরকে ও মানবীয় মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়েছি। ফলে সৃষ্টিকর্তা পরমেশ্বর সৃষ্ট মানুষের হাতে সৃষ্টিকে যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের যে দায়িত্ব দিয়েছে আমরা তা যথাযথভাবে পালন না করে জগৎ ও জীবনকে আবর্জনা দিয়ে পরিপূর্ণ করে তুলেছি, বিভিন্ন পন্থায় ধ্বংস করছি। প্রকৃতি কাঁদছে, প্রাণী জগৎ বিপন্ন, মানবতা হাহাকার করছে। আমাদের কাজের ফল আমরাই ভোগ করতে শুরু করছি। যদি আমরা মন পরিবর্তন না করি, নিজেদের সংশোধন করে যথাযথ পদক্ষেপ না নেই, যদি ঈশ্বরের অনুগ্রহ যাচ্না না করি এবং সন্তানদের সেই বিশ্বাসে ও মূল্যবোধে গড়ে না তুলি ... তাহলে আগামীতে বর্তমান সময়ের চাইতেও আরও কঠিন ও জটিল বাস্তবতার সম্মুক্ষীণ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমান সংকট আমাদের কাছে যেন দাবী করছে ... আমরা যেন আত্নসুখ বিসর্জন দিয়ে জগতের সর্বাঙ্গীন উন্নতি ও মানব জাতির মংগলের জন্য ভূমিকা রাখি। ঈশ্বরকে ব্যাকুলভাবে ডাকি, কেননা আমরা যতই পাপী হই না কেন, যতই দূরে সরে থাকি না কেন; বিপদকালে আমাদের ডাকে তিনি সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেন না। নতুবা বিপদ বা ধ্বংস অনিবার্য। তাই এখনই সময় মন পরিবর্তন করা; অন্তর পরিশুদ্ধ করা। এজন্য আমাদের পবিত্রাত্নার জ্ঞান-আলো ও শক্তি একান্ত প্রয়োজন। পবিত্রাত্না আমাদের অন্তরকে আলোকিত করতে পারে, নতুন চেতনা দান করতে পারেন, তাঁর দিব্য শক্তিতে পরিপূর্ণ করতে পারেন যাতে আমরা যিশুর শিক্ষায় পথ চলতে পারি এবং তাঁর আদেশ মত জীবনযাপন করতে পারি। তবেই সুপ্রতিষ্ঠিত হবে যিশুর প্রতিশ্রুত ও কাংখিত প্রেমের, মিলনের, সত্যের ও শান্তির রাজ্য। যেভাবে পবিত্রাত্মা এসে শিষ্যদের জ্ঞান, শক্তি ও সাহস দিয়েছেন, একইভাবে বর্তমান সময়ে তিনি বিশ্বাসীদের একই দানে ভূষিত করেন যাতে আমরা শিষ্যদের মত করে সকল মানুষের কাছে ঈশ্বরের ভালবাসা ও মুক্তির কথা প্রচার করি ও সাক্ষ্য দেই।
আমরা স্বপ্ন দেখি সেই দিনের যে দিন শান্তি পৃথিবীতে রাজত্ব করবে; স্বপ্ন দেখি সেই দিনের যে দিন সকল মানুষ এক পরিবারের মত বাস করবে। স্বপ্ন দেখি সেই দিনের যে দিন কোন বৈষম্য/ ভেদাভেদ, দলাদলি মানব সমাজে বিরাজ করবে না। আমাদের স্বপ্ন তখনই বাস্তব হবে যখন পবিত্র আত্মাকে সুযোগ দেব আমাদের পরিচালনা করতে। পবিত্র আত্মা লাভের পর শিষ্যদের কথা উপস্থিত লোকেরা নিজের ভাষায় বুঝতে পেরেছিলো । ভাষা বা কথার এমন শক্তি যা বিচ্ছিন্ন করতে পারে, আবার একও করতে পারে। যারা ঈশ্বরের আত্নিক শক্তিতে কথা বলে তারা মানুষের মাঝে নিয়ে আসে মিলন ও শান্তি; কিন্তু যারা ঈশ্বরের আত্নিক শক্তিতে কথা বলে না তারা নিয়ে আসে বিভেদ, বিচ্ছিন্নতা ও ধ্বংস । পবিত্রাত্মা কিভাবে দূর্বল, হতাশ, নিরাশ, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পরা শিষ্যদের একএিত করেছে, রুপান্তরিত করে তাদের বিশ্বাসী করেছেন; গড়ে তুলেছেন খ্রিস্টেতে এক দেহ-স্বরুপ।
পবিত্রাত্নার উপর বিশ্বাস থাকলেই যথেষ্ট নয়, বরং পবিত্রাত্নায় চালিত মানুষ হওয়া এবং তাঁর শক্তিতে ও চেতনায় কাজ করা, যা আমাদের রুপান্তর ঘটায়। যেন ফল দেখেই গাছ চেনা যায়। যখন আমরা পবিত্রাত্নার শক্তিতে নিজেদের হৃদয়-মনকে রুপান্তরিত করতে সক্ষম হবো, অন্তরে বিশ্বাসের শক্তি ও আস্থা নিয়ে কথা বলতে পারবো এবং জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে বিশ্বাসের সত্য প্রচার করতে পারবো, তখন এই আমরাই আমাদের পরিবার, ধর্মপল্লী, তথা সমগ্র মন্ডলীকে একতা, ভালবাসা, ক্ষমা ও সহভাগিতার সমাজ রুপে গড়ে তুলতে প্রয়াসী হবো। সাধু পলের কথায় আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন দিব্য দানে ভূষিত, তবে যিনি তা দিয়ে থাকেন সেই পবিত্র আত্না কিন্তু এক। আমাদের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সেবাকাজ সাধিত হয় কিন্তু যাঁকে সেবা করা হয় সেই প্রভু এক। পবিত্রাত্নার শক্তিতে আমরা সকলে দীক্ষাস্নাত হয়ে খ্রিস্ট-দেহের অঙ্গ হয়ে উঠেছি। যেভাবে দেহের অঙ্গগুলো অনেক হয়ে সব’কটি মিলে এক দেহ হয়; তেমনি আমরা ভিন্ন ভিন্ন অংগ-প্রত্যঙ্গ হলেও খ্রিস্টের সাথে সংযুক্ত থেকে এক দেহ হয়ে উঠি। মণ্ডলী খ্রিস্টের দেহ আর খ্রিস্ট হচ্ছেন মস্তক-স্বরুপ। খ্রিস্ট থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে কেউই আধ্যাত্নিক ভাবে জীবিত থাকে না; প্রকৃত বিশ্বাসী রুপে বাস করতে পারে না। পবিত্র আত্নাই আমাদেরকে খ্রিস্ট দেহের সাথে সংযুক্ত থাকতে, এক থাকতে সাহায্য করে। আজকের দিনে পবিত্র আত্নাকে মন-অন্তর দিয়ে ডাকি, তাঁর আলো যাচ্না করি যাতে আমাদের কোন কথা বা কাজ খ্রিস্ট দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না পারে। বরং খ্রিস্টের সাথে আরও দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থেকে, প্রাপ্ত দিব্য দানগুলো যথাযথ ভাবে কাজে লাগিয়ে জগৎ, জীব ও ভাই-বোন সকল মানুষের সেবা দিতে পারি। খ্রিস্ট-দেহের সাথে সংযুক্ত থাকার গুণে হয়ে উঠবো নতুন মানুষ। খ্রিস্টের ভালবাসায় ও পবিত্র আত্নার শক্তিতে গড়ে তুলতে পারবো নতুন পৃথিবী। ঈশ্বর আমাদের সকলকে এই আর্শীবাদ ও অনুগ্রহ দান করুন।
Add new comment