ব্যথা উপশম থেকে শান্তি অনেক বড়

অন্তরের আধ্যাক্তিক শান্তি হলো মানুষের আসল শান্তি। ব্যাথানাশক ঔষধ সেবন করে সাময়িক উপশম লাভ করা যায়, কিন্তু তা শরীরের স্থায়ী চিকিৎসা নয়। এতে করে স্নায়ুর উত্তেজনা হ্রাস পায় বটে এবং একটা সময়ের জন্য দেহকে শান্ত করে মাত্র। কিন্তু আবার একটা নির্দিষ্ট সময় পর  দেহে ব্যাথার উদ্রেক হয়। শরীরে আঘাতজনিত কারণে ব্যাথার নিরসন একটা ঔষধের প্রয়োগের মাত্রা, আজকে এটা একটা কমন চিকিৎসা। সহজে এই চিকিৎসা মিলে। এই ক্ষেত্রে অনেকে আবার নিজেই নিজের চিকিৎসা করেন। জনপ্রিয় এই চিকিৎসা ডাক্তারদের ভাষায়ও একটা সাময়িক আরোগ্যলাভ, একটা সাময়িক সমাধান মাত্র। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ব্যাথা দমিয়ে পরে মূল চিকিৎসা শুরু হয়। জরুরিকালেও এমন ব্যাথানাশক চিকিৎসা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। পরে চিকিৎসকগণ খুঁজতে থাকেন ব্যাথার কারণ বা উৎপত্তি কোথায়।

পোপ ফ্রান্সিস, কয়েকদিন আগে শান্তি নিয়ে তাঁর এক সহভাগিতায় বলেন, মনোজগতে শান্তির যে ধারণা তিনি দেখছেন, সেটার সঙ্গে প্রকৃত শান্তির ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। পোপ, ভাটিকান সিটি থেকে এক সরাসরি বার্তায় জোর দিয়ে বলেছেন, মানুষের দৈহিক শান্তি, স্থায়ী শান্তির সারকথা নয়। মানুষের জীবনে আসল শান্তি তৈরি হতে পারে মাত্র খ্রিস্টের স্বার্থহীন ভালোবাসার মধ্যে জীবন যাপন করে। তিনি বলেন, শান্তি যে একটা শিল্প, যারা প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের সন্তান তারাই বৃঝতে পারেন এবং তারাই জীবনে অনুশীলন করতে পারেন। বিশ্বজুড়ে শান্তির একটা ভূল ব্যাখ্যার কথা উল্লেখ করে পোপ বলেন, বহুলভাবে বিষয়টি প্রচলিত যে, শান্তি শরীরের উপশম বা আরাম মাত্র। বাস্তবে বিদ্যমান এই শারীরিক উপশম ধারণা মানুষের আত্মিক গঠনে  ঘাটতি তৈরি করে। পোপ বলেন, আধুনিক মনোবিদ্যার মানুষ অশান্তিকে বুঝাতে চান, শরীরের মধ্যে কোনো কারণে সমন্বয় ও ভারসাম্য না থাকা। তাঁর মতে, এটা একটা অসমাপ্ত ধারণা, কারণ যখন মানুষের শরীরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও ভারসাম্যের অভাব দেখা দেয়, তখন আমাদের বুঝতে হবে- এটা তার আত্মায় শান্তি গঠনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। পোপ ফ্রান্সিস বলেন, অনেক সময় মানুষের জীবনে একটা অস্বাভাবিক  অবস্থার সৃষ্টি হয়, যে অবস্থা মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক সুযোগ তৈরি করে- ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের জন্য। পোপ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দৈহিক উপশম মানুষের সাংসারিক জীবনের ক্ষণস্থায়ী শান্তি মাত্র- প্রকৃত আধ্যাক্তিক মুক্তিই হলো মানুষের স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী মুক্তি।

যুগ যুগ ধরে মানুষ কতো ভাবেই না অশান্তির মধ্যে পড়েছে। প্রাকৃতিক-পরিবেশ বিপর্যয়, বিশ্বের উপর মানুষের তৈরি নানা অনিয়ম, মানুষকেই বিপর্যয ও অশান্তির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু সেটাই বিশ্বের শেষ কথা নয়। বিশ্বের সেই অস্বাভাবিক অবস্থা, সেটা স্থায়ী কোনো বিপর্যয়, স্থায়ী কোনো অশান্তি ছিলো না। এক সময় কেটে গেছে সেই অস্বাভাবিক অবস্থা। আবার জেগে উঠেছে প্রাণ চাঞ্চল্য। মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের। আর তখনই ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের দিকে ফিরে তাকিয়েছেন। তিনি তেমনি এক আশার কথা জানিয়েছেন, ভাটিকান সিটি থেকে ।

পোপ ফ্রান্সিস মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাস সর্ম্পকে বলতে গিয়ে সাধু যোহনের মঙ্গলসমাচার থেকে উল্লেখ করে বলেন,  খ্রিস্ট বলেছেন, “তোমাদের শান্তি হোক। আমার শান্তি আমি তোমাদের দিয়ে যাচ্ছি। অবশ্য এ সংসার যেভাবে শান্তি দেয়, ঠিক সেভাবে আমি তোমাদের দিয়ে যাচ্ছি না”  (যোহন ১৪:২৭)। আসুন আমরা সেই আশায় থাকি, আমরা এই বিপদ থেকে অচিরেই উদ্ধারলাভ করবো। আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসবে শান্তি। - ফাদার সুনীল রোজারিও ।

Add new comment

4 + 3 =