Radio Veritas Asia Buick St., Fairview Park, Queszon City, Metro Manila. 1106 Philippines | + 632 9390011-15 | +6329390011-15
পোপের ইরাক সফর ছিলো আধুনিককালের ধর্মীয় ইতিহাসের একটি বিরল ঘটনা
এই আন্তঃধর্মীয় বৈঠক ছিলেন শিয়া মুসলিম ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী আল-সিস্তানী এবং রোমান ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস।
রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস গত ৫ মার্চ থেকে চারদিনের ইরাক সফর করেছেন। তাঁর ইরাক সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি ধর্মীয় নেতাদের সাথে আন্তঃধর্মীয় বৈঠকে অংশ নেন।
পোপ, দক্ষিণ ইরাকের পবিত্র এবং প্রাচীন উর শহর সফর করেন। উর হলো আদি পিতা আব্রাহামের জন্মস্থান এবং আব্রাহামকে, ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানগণ তাদের নবী হিসেবে জ্ঞান করে থাকে। উর সফরকালে পোপ উপস্থিত ইসলাম এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের “শান্তির জন্য ঐক্য” ও ধর্মীয় সহনশীলতার বাণী উচ্চারণ করেন।
পোপ তাঁর বাণীর শুরুতেই বলেন, “ঈশ্বরের আরাধনা এবং প্রতিবেশীকে ভালোবাসা হলো ধর্মের সারকথা, সত্যতা।” তিনি ইরাকী মুসলিম ও খ্রিস্টানদের বৈরীতা ভুলে গিয়ে শান্তি এবং ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
পোপ ফ্রান্সিস, ইরাকে ধর্মীয় বিভেদ ও কয়েক দশক ধরে চলে আসা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তাঁর শান্তি. ভ্রাতৃপ্রেম ও ঐক্যের বাণী উপস্থাপনের জন্য- আদি পিতা আব্রাহামের জন্মস্থান এবং প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া পবিত্র উর শহর বেছে নেন।
উর শহরে পোপ ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “এটা আমাদের মূলে ফিরে যাওয়া, ঈশ্বরের কর্মের উৎসে- আমাদের ধর্মের জন্মস্থানে।” তিনি বলেন, “এখানে আমরা আব্রাহামের সন্তান হিসেবে একত্রে প্রার্থনা করতে পারি।” আদি পিতা আব্রাহাম- মুসলিম, খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের কাছে অভিন্ন প্রবক্তা।
পোপ তাঁর ভাষণে বলেন, “আমাদের পিতা আব্রাহামের এই জন্মস্থান থেকে বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে, অতএব সত্যিকারভাবে গ্রহণ করি যে, ঈশ্বর হলেন দয়াশীল। আর যদি আমরা আমাদের ভাই-বোনদের ঘৃণা করি তাহলে সেটা হবে ঈশ্বর নিন্দা।”
তিনি এই প্রসঙ্গে আরো বলেন, “বৈরী স্বভাব, চরমপন্থা এবং বিবাদ একজন ধর্মের অনুসারীর আত্মায় জন্ম নিতে পারে না- সেটা হলে হবে বিশ্বাস ঘাতকতা।” তাঁর মতে, ইরাকে কখনো শান্তি ফিরে আসবে না- যদি এক ধর্মের মানুষ অন্যকে ভিন্নভাবে দেখে।
তিনি বলেন, “কারা হারলো আর কারা জিতলো, এটা শান্তির দাবী নয়- কিন্তু আসল সত্য হলো সবাই ভাই-বোন এবং সমস্ত ভুলবোঝাবুঝি ভুলে, অতীতের ব্যাথা ভুলে, সংঘর্ষের পথ থেকে ঐক্যের দিকে যাত্রা।”
আব্রাহাম মুসলিম, খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের কাছে আদি পিতা হিসেবে গণ্য হলেও উর শহরের আন্তঃধর্মীয় সভায় কোনো ইহুদি উপস্থিত ছিলেন না। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ইহুদি রাষ্ট্র জন্মের এক বছর আগেও ইরাকে দেড়লাখ ইহুদি বাস করতেন।
পোপের ইরাক সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ বৈঠকটি ছিলো আয়াতুল্লাহ আলী আল-সিস্তানী শিয়া ধর্মীয় নেতার সঙ্গে। ৯০ বছর বয়স্ক শিয়া ধর্মীয় নেতা পবিত্র নাযাফ শহরে অবসর জীবন যাপন করেন। ৮৪ বছর বয়স্ক পোপ ফ্রান্সিস এই শিয়া ধর্মীয় নেতার সঙ্গে একান্ত পরিবেশে ৫০ মিনিট সময় ধরে বৈঠক করেন।
এই বৈঠকে উভয় নেতাই ইরাকে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের সৌহার্দ ও শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের উপর তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন। শিয়া নেতা সিস্তানী বলেন, “ধর্মীয় নেতাদের একটি দায়িত্ব হলো ইরাকী খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা- যেনো তারা পূর্ণ অধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেন।”
উভয় ধর্মীয় নেতাই একমত প্রকাশ করে বলেন যে, এটা ইরাকী খ্রিস্টান এবং একই সঙ্গে মুসলমানদের জন্য উত্তম যদি দেশের ধর্মীয় নেতাগণ একসাথে সহবস্থানের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন।
আল-সিস্তানী ইরাক সফরের জন্য পোপ ফ্রান্সিসকে ধন্যবাদ জানান এবং তাঁর দিক থেকে ইরাকী খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা ও পূর্ণ সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
শিয়া ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী আল-সিস্তানীর সঙ্গে ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিসের এই আন্তঃধর্মীয় বৈঠক ছিলো আধুনিককালের ধর্মীয় ইতিহাসের একটি বিরল ঘটনা।-ফাদার সুনীল রোজারিও।
Add new comment