“লাউদাতো --সি” সপ্তাহ: ১৬-২৪ মে, ২০২০

১।  “লাউদাতো - সি” কী? 

পোপ ফ্রান্সিসের সর্বজনীন একটি পত্র, যা বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে, “হোক তব প্রশংসা’ নামে।   ৫ বছর আগে প্রকাশিত হয়; মূলবিষয়: “প্রকৃতি ও পরিবেশ”: “ধরিত্রী - সর্বসাধারণের বসতবাটির যত্ন”।

২।  পেক্ষাপট

প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপর্যয়, জলবায়ূর পরিবর্তন;  প্রথিবীর বিলাপ ও মানুষের কান্না। প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপর্যয়ের লক্ষণ:  দূষণ: বায়ূ, শব্দ, জল, মৃত্তিকা; বর্তমান যান্ত্রিক উন্নয়নের আশীর্বাদের সাথে অনেক অভিশাপ: বর্জ্য, আবর্জনা, অপচয়, জীববৈচিত্রের হ্রাস, মাত্রারিক্ত ভোগবিলাস আবার দারিদ্রের চরম দুর্দশা; প্রকৃতিজাত, সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব; রোগ-পীড়া, মহামারির প্রাদুর্ভাব; পৃথিবীর উদ্ভিদ ও প্রাণী জাতির বিলোপন ও সাধারণ মানুষের দারিদ্র বৃদ্ধি; অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও শরণার্থী বৃদ্ধি।

৩। দায়ী কে?

মানুষ। মানুষের দায়বদ্ধতা: (ক) সৃষ্টির প্রতি, প্রকৃতি প্রেম ও যত (খ) মানুষের প্রতি; দরিদ্রদের সাথে একাত্ম (গ) সৃষ্টিকর্তার প্রতি (বিশ্বস্ত কর্মচারীর দায়িত্ব)

৪।  করোনা ভাইরাসের প্রকোপে সবাই জর্জরিত ও আক্রান্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে।  এর জন্য মানুষই দায়ী।  মহামারির আঘাত সবার ওপরে, বর্তমানে ও ভবিষ্যতে তার দীর্ঘকাল ধরে চলবে।  কেউ-ই বাদ পড়ছে না। মহামারির ফল মানুষের জন্য যখন বিপর্যস্ত, তখন দেখা যাচ্ছে প্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণী জগত ও পরিবেশের মধ্যে একটি স্বস্তির অনুভূতি।  এটাই প্রমাণ করে সৃষ্টি ও পরিবেশের প্রতি কী নির্যাতন না চলছে।

৫।  প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে যে সমস্যা তা মারাত্মক; পৃথিবী ধ্বংসের পথে; জরুরীভাবে এর সমাধান একান্ত প্রয়োজন। “সমন্বিত মানবিক উন্নয়ন” বিষয়ক পোপের দপ্তর দ্বার “লাউদাতো - সি সপ্তাহ” ঘোষণা; ১৬-২৪ মে ২০২০; সমস্ত বিশ্বের কাছে বিশেষভাবে কাথলিকদের কাছে আহ্বান। 

৬।  ঘোষণার সময়, পোপের প্রশ্ন: আমাদের ভবিষ্যত সন্তানদের হাতে কী ধরনের পৃথিবী রেখে যেতে চাই? ধরণীর বিলাপ ও দরিদ্রদের এরূপ কান্না আর কতকাল চলবে?   এবছরই (ফ্রান্সের কনফারেন্স ২০২০) শেষ বছর জরুরীভাবে পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। 

৭।  আমাদের করণীয়:

ক) শিক্ষা গ্রহণ করা, সচেতন হওয়া ও মানুষকে সচেতন করা।

খ) ধর্মবিশ্বাসের আলোকে প্রকৃতি ও সৃষ্টিকে দেখা এবং নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যার প্রথম ধাপ হচ্ছে অন্তরের পরিবর্তন। 

গ) স্মরণে রাখা যে, যান্ত্রিক উন্নয়নই মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন নয়; মানবিক উন্নয়ন সর্বদাই সমন্বিত।

ঘ)  অঙ্গীকার:

(১)  অঙ্গীকার করি যে, আমি সৃষ্টির জন্য এবং সৃষ্টির সাথে প্রার্থনা করব।

(২)  অঙ্গীকার করি যে, আরও সহজ সরল জীবন যাপন করব।

(৩)  অঙ্গীকার করি যে, আমাদের সর্বসাধারণের বসতবাটির পক্ষে কথা বলব।

(৪)  আমি আরও প্রতিজ্ঞা করি যে,

 খাদ্য ও পানীয় অপচয় করবো না।

 আমি আরও গনপরিবহনে যাতায়ত করব

 আমার যা প্রয়োজন শুধু তাই ক্রয় করবো, এভাবে মিতব্যয়ী হব

 সকল বর্জ ফেলার জন্য সুব্যহস্থা গ্রহণ করব

 এই ধরিত্রী সুরক্ষা করার জন্য আমার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রেরণা দেব।     

ঙ) প্রত্যেকের প্রাত্যহিক ও ব্যবহারিক জীবনে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেমন:

(১) পরিস্কার-পরিচ্ছনতা -- নিজের দেহ থেকে শুরু করে পোশাক-আশাক, ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট, কর্মস্থল, সমাবেশস্থল, প্রভৃতির পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা;

(২) জিনিসপত্র ও দ্রব্যসামগ্রীর অপব্যবহার, অপচয় ও ভোগের মানসিকতা বর্জন;

(৩) সকল প্রকার দূষণ - শব্দ, বায়ূ ও জল - ইত্যাদির দূষণ থেকে বিরত থাকা;

(৪) প্রয়োজন-অতিরিক্ত খরচপাতি, ভোগবিলাস, ভোজনবিলাস, সকল প্রকার অপচয় থেকে বিরত থাকা;

(৫) প্রকৃতিজাত, বিশুদ্ধ ও সুষম খাদ্য আহার ও পানীয় পান করা।

কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি , ১১ মে, ২০২০

 

Add new comment

10 + 7 =