বিশ্ব শ্রমিক দিবসে মহান সাধু যোসেফ সম্পর্কে একটি অনুধ্যান

সাধু মথি ও লুকের মঙ্গলসমাচার অনুসারে, শ্রমিক সাধু যোসেফ ছিলেন যাকোবের ছেলে (মথি:১:১৬পদ)। আর যাকোব ছিলেন হেলির পুত্র (লুক ৩:২৩)। তিনি ছিলেন দায়ূদ বংশের লোক। বেৎলেহেমের দায়ূদ নগরে যোসেফের জন্ম হয়েছিলো। যোসেফ, স্বর্গদূতের দর্শনলাভের কিছু দিন আগে থেকে, স্থায়ীভাবে নাজারেথ নামক স্থানে বসবাস করতে থাকেন। কথিত আছে, জীবিকা নির্বাহের জন্য যোসেফ এক সময় গালেলিয়ায় চলে যান, তবে বিষয়টি  ততো স্পষ্ট নয়। মথি (১৩:৫৫ পদ) এবং মার্ক (৬:৩ পদ) মঙ্গলসমাচারে দেখতে পাই, তিনি পেশায় ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি। তবে এখানে শুধু কাঠমিস্ত্রি বললে যথেষ্ট নয় তিনি ভালো প্রকেশৈলী  ছিলেন বলে ঐতিহাসিকদের মধ্যে ধারণা রয়েছে।

খুব সম্ভবত: যোসেফ নাজারেথেই মারীয়ার সাথে বাগ্বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে ঠিক কোন্ সময় যোসেফের সাথে মারীয়ার আনুষ্ঠানিক বিবাহ হয়েছিল তা স্পষ্টভাবে বলা কঠিন। কেউ বলেন যিশুর জন্মের আগে আবার কেউ ধারণা করেন যীশুর মানবরূপ ধারণ করার পরে। মঙ্গলসমাচারে এভাবেই বর্ণিত আছে যে, মারীয়া গর্ভবতী থাকায়, বাগ্দানের পরেই স্বর্গদূত গাব্রিয়েল তাকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন। তখন থেকে শুরু হয় তাঁর ঝুঁকিপূর্ণ জীবন। তিনি প্রথমত: স্বর্গদূতের কথায় সন্দিহান হলেও পরে আশান্বিত হোন এবং স্বর্গদূতের কথায় তিনি ঘুম থেকে উঠে মারীয়াকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ঘরে তুলে নেন। এই সম্মতিদানের মাধ্যমেই তিনি যিশুর পালক পিতা হওয়ার অধিকার লাভ করেন। সেই সাথে, মানব মুক্তির ইতিহাসে  একজন সাধারণ শ্রমিক হয়েও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব লাভ করেন।

ইতিহাসবিদদের ধারণা, যিশুর প্রৈরেতিক জীবন শুরুর ঠিক আগে, যোসেফ মৃত্যুবরণ করেন। যিশুর কাজ দেখে অনেকে বলেছিলেন,‘ও কি যোসেফের ছেলে নয়?’ কিন্তু পরে বাইবেলে আর যোসেফের কথা শুনা যায় নি। অনেকে মনে করেন, যোসেফ ১১১ বছর বয়সে ১৮ বা ১৯ খ্রিস্টপূর্ব, জুলাই মাসের ২০ তারিখ নাজারেথে মৃত্যুবরণ করেন।

প্রতি বছর পহেলা মে আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবসে সাধু যোসেফের পর্ব পালন করা হয়। পোপ দ্বাদশ পিউস ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এই পর্ব পালনের ঘোষণা দেন। যোসেফ হলেন শ্রমজীবী মানুষদের আদর্শ। তাঁর জীবনের অনেক গুণাবলীর মধ্যে যোসেফ ছিলেন ধৈর্যশীল, অধ্যবসায়ী ও কঠোর পরিশ্রমী।

শ্রমিক সাধু যোসেফের উপর ধ্যান করলে আমরা দেখতে পাই , তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শ্রমিক, তাঁর কর্তব্য ও দায়িত্বে তিনি নিরবে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। তাঁর শ্রমজীবনে তিনি সৎকর্ম, সৎচিন্তা ও নিরহংকার হৃদয়ের মাধ্যমে, তাঁর কর্ম জীবনকে অর্থাৎ শ্রমিক জীবনকে সার্থক করে তুলেছিলেন। তাঁর কাজ শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনের খাতিরে ছিল না বরং তা ভালবাসার প্রেরণায়ই তিনি করেছিলেন। শ্রমিক জীবনে তিনি ছিলেন ঈশ্বরের একান্ত অনুগ্রহ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তিনি যীশুকে লালন-পালন করার যে গুরুদায়িত্ব পেয়েছিলেন তা তিনি অত্যন্ত যত্নের সাথে পালন করেছিলেন।

আমরা মহান সাধু যোসেফের আদর্শকে সামনে রেখে, আমাদের জীবন পরিচালনা করতে পারি। তার আর্দশ অনুসরণ করতে গেলে বড় কোন কিছু করার প্রয়োজন নেই, ছোট ছোট দায়িত্বগুলো বিশ্বস্ততার সাথে করে, আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারি। আমাদের কেউ  হয়তো কোনো কোনো কাজে সুদক্ষ এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, ফলে সফলতা খুব সহজেই হাতে এসে যায়। কিন্তু আমাদের সাবধান হতে হয় যেন অহংকার বা গর্বের বশবর্তী না হই।  শ্রমিক সাধু যোসেফের কাছ থেকে আমরা আরেকটি আদর্শ অনুসরণ করতে পারি আর তা হলো তার সরলতা ও বাধ্যতা। তিনি সরল মনে ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হয়ে জীবন যাপন করে গেছেন। তাই আসুন আমরা শ্রমিক সাধু যোসেফের দেখানো পথে অনুপ্রাণীত হয়ে শিক্ষালাভ করি। সেই সাথে এই আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবসের অনুপ্রেরণায় এবং শ্রমিক সাধু যোসেফের আদর্শে আমরা আমাদের কাজকর্ম যেনো ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততা সহকারে করতে পারি- ঈশ্বর আমাদের সেই আর্শীবাদ দান করুন। - ফাদার নিখিল গমেজ

Add new comment

1 + 5 =